img

Follow us on

Wednesday, May 15, 2024

Post Poll Violence: ছেলে বিজেপি করে, এই 'অপরাধে'ই কি নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছিল মাকে!

বিজেপিতে ভোট দেওয়ায় প্রকাশ্যে মেয়ের সামনে মাকে কান ধরে ওঠবস করানো হয়েছে, ২৬ সেকেন্ডের ভিডিও ঘিরে পড়ে গিয়েছিল হইচই

img

অত্যাচারিতদের পাশে তদানীন্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর। ফাইল ছবি

  2023-05-05 18:29:57

ঠিক দু-বছর আগের কথা। ২০২১ সালের ২ মে। কোভিড দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রাজ্যে। কিন্তু তাতে কী। শাসক তৃণমূল তখন ফের 'মধুভাণ্ড' ফিরে পাওয়ার নেশায় বুঁদ। ভোটের ফলে যখন পরিষ্কার হয়ে গেল, তৃতীয়বারের জন্য মসনদের দখলদারি তাদের হাতেই থাকছে, তখনই যেন বেরিয়ে পড়ল নখ-দন্ত। বিরোধীদের অভিজ্ঞতা অন্তত তেমনটাই। তাদের অভিযোগ, বিজয়োল্লাসের নামে শুরু হয়ে গেল প্রতিপক্ষকে 'টাইট' দেওয়ার কাজ। তাদের স্মৃতিতে ভাসছে, চটুল গান, অশ্রাব্য গালিগালাজ, অভব্য অঙ্গভঙ্গি, রাস্তার দোকানে ভাঙচুর এবং বিরোধী দলের কর্মীদের প্রতি হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড-কিছুই বাদ যায়নি। ভয়ঙ্কর সেইসব ঘটনা নিয়েই আমাদের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের চতুর্থ পর্ব।

 

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গে এই ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাস শুধু রাজনৈতিক সংঘর্ষ (Post Poll Violence) ছিল না, সামজিক, আর্থিক ও ধর্মীয় সন্ত্রাসেরও শিকার হতে হয়েছে অসহায় মানুষকে। ৩৮.২ শতাংশ ভোট পেয়েছে বিজেপি, তাই চরম হিসাব দিতে হয়েছে তাদের কর্মী-সমর্থকদের। নির্যাতন থেকে বাদ যায়নি বাংলার নারীসমাজ। এমনটাই অভিযোগ বিরোধী দলের। অভিজ্ঞ মানুষের মুখেও বারবার শোনা গিয়েছে একটাই কথা, স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে বামপন্থী লাল সন্ত্রাসকেও বহুগুণ ছাপিয়ে গেছে এই রাজনৈতিক সবুজ সন্ত্রাস। 

কেমন ছিল নারী নির্যাতনের ছবি?

নির্বাচন সময়পর্বে কোচবিহারে রাজবংশী সমাজের মেয়েকে অপহরণ করা হয়েছিল। নিখোঁজ তরুণীর বাবা পুলিশ সুপারের কাছে তা জানান। কিন্তু অভিযোগ, পুলিশ-প্রশাসন ছিল নিষ্ক্রিয়। বিজেপির অভিযোগ, হুগলির বদনগঞ্জের মাধবী আদককে খুন করা হয়েছে কেবলমাত্র তাঁর ছেলে তাদের দল করে বলে। নন্দীগ্রামে বিবস্ত্র করে এক গৃহবধূকে ধর্ষণ করে খুন (Post Poll Violence) করা হয়। সেই নির্যাতিতা নারীর সামজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ব্যাপক ভাইরাল হয়েছিল। কোচবিহারের মাথাভাঙার শিকারপুরে নাবালিকাকে ধর্ষণ করতে দুবার ভাবেনি দুষ্কৃতীরা। থানায় অভিযোগ পর্যন্ত নেওয়া হয়নি বলে নির্যাতিতার পরিবার জানিয়েছিল। বর্ধমানের আউশগ্রামেও দুই নাবালিকাকে ধর্ষণ করা হয়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুরে বিজেপি সমর্থক দেবনাথ প্রামাণিকের স্ত্রী আর মেয়েকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় ভোটদানের আগের দিন। ফলে তাঁদের পক্ষে আর ভোট দেওয়াই সম্ভব হয়নি।

শীতলকুচির ১২৬ নম্বর বুথে এক গৃহবধূ ভোট দিতে গেলে মায়ের গলায় দা ঠেকিয়ে কোলের সন্তানকে অপহরণ করেছিল স্থানীয় দুষ্কৃতীরা। স্থানীয় গুন্ডারাই এই অপকর্ম করেছে বলে সন্তানের মা অভিযোগ জানিয়েছিলেন। মেদিনীপুরের পটাশপুরে শাশ্বতী জানাকে ধর্ষণ করে খুন করা হয় নির্বাচন পরবর্তী সময়ে। উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ায় ভাস্বতী বর্মনকে ধর্ষণের হুমকি দিয়ে পায়ে গুলি চালায় শাসকদলের দুষ্কৃতীরা, এমনটাই অভিযোগ। এই খবর সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বর্ধমানের জামালপুরে আশিষ ক্ষেত্রপালের মা কাকলি ক্ষেত্রপালকে টাঙ্গি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা (Post Poll Violence) করা হয়। খেজুরি ২ নম্বর ব্লকের বারাতলা পঞ্চায়েত এলাকায় এক পঞ্চাশোর্ধ্ব মহিলাকে বাড়িতে ঢুকে গণধর্ষণ করে দুষ্কৃতীরা। 

বর্ধমানের বৈকুন্ঠপুরের হ্যাচারি রোড ক্যানালপাড়ের বাজারে শুধুমাত্র বিজেপিতে ভোট দেওয়ার জন্য প্রকাশ্যে মেয়ের সামনে মাকে কান ধরে ওঠবস করানো হয়েছে। ২৬ সেকেন্ডের এই ভিডিও প্রকাশিত হওয়ায় হইচই পড়ে যায়। সভ্য সমাজের আক্ষেপ, পশ্চিমবঙ্গ এইভাবে মা ও মেয়ের উপর অত্যাচার দেখবে বলে কোনওদিনই প্রস্তুত ছিল না। ১০ মে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক প্রতিনিধিদল গোবিন্দ মোহনের নেতৃত্বে ধনিয়াখালির চকহিরণ্যবাটীতে গেলে অর্চনা মাঝি নামে এক সাধারণ মহিলা জানিয়েছিলেন, তাঁরা ঘরছাড়া ছিলেন ফলাফল ঘোষণার পর থেকেই। তৃণমূলের লোকেরা রোজ শাসাচ্ছে। অর্চনাদেবীর কাতর আবেদন ছিল, শান্তিতে যাতে থাকতে পারি, সেই ব্যবস্থা করুন। লোকাবাটি গ্রামের গৃহবধূ আসমা তারা জানিয়েছিলেন, ফল প্রকাশের পরের দিন দুপুরে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে লাঠি, বাঁশ নিয়ে বাড়িতে হামলা (Post Poll Violence) চালিয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর করে সমাজবিরোধীরা। ৩১ মে ভাটপাড়া পৌরসভার ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে দুষ্কৃতীরা মা সুজাতা নাথ এবং ছেলে সঞ্জীব নাথকে মারধর করে। সঞ্জীব নিজে বিজেপি করত, এটাই ছিল তার অপরাধ। 

সক্রিয় জাতীয় শিশু অধিকার রক্ষা এবং মহিলা কমিশন

হিংসার কারণে ১ জুন দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় সহ একাধিক পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে তদন্তের সুপারিশ করে জাতীয় শিশু অধিকার রক্ষা কমিশন। জাতীয় মহিলা কমিশন রাজ্য পুলিশের ডিজিকে ধর্ষণ, খুন নিয়ে (Post Poll Violence) বিশেষ চিঠি পাঠিয়েছিলেন। রামনগরে সন্ত্রাস চালায় তৃণমূল সন্ত্রাসীরা, এমনটাই অভিযোগ। যার প্রভাব পড়ে শিশুদের উপর। প্রায় ৬০০ পরিবার ঘরছাড়া এবং প্রায় ২০০ শিশু অনাহারে দিন কাটাচ্ছে বলে কমিশন জানিয়েছিল। এই ঘটনার পিছনে প্রধান অভিযুক্ত ছিলেন তৃণমূল নেতা জাহাঙ্গির খান। আবার বর্ধমানের আউসগ্রামের ৬০টি পরিবার ঘরছাড়া হয়। তাঁবুতে দিন কাটে তাদের। পরিবারগুলি অনাহারে দিনপাত করে। শিশুরা অভুক্ত, খাদ্য নেই, বস্ত্র নেই, চিকিৎসা নেই, এমনই ছিল করুণ অবস্থা। বারাসতের ৬, ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডে ৫০ টি পরিবার, কল্যাণীতে ৩৫ টি পরিবার এবং নানুরে ১০০ পরিবার ঘরছাড়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছিল। (চলবে)

 

পর্ব ১: গলায় সিসিটিভি-র তার পেঁচিয়ে, পাথর দিয়ে থেঁতলে খুন করা হয়েছিল অভিজিৎ সরকারকে!

পর্ব ২: ৩-৪ মাসে খুন ৬২ জন, দুষ্কৃতীরা ছাড়েনি অন্তঃসত্ত্বাকেও!

পর্ব ৩: ৪০ হাজার ঘরবাড়িতে লুটপাট, এক লক্ষ পরিবার ঘরছাড়া, হামলা চলেছিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কনভয়েও!

পর্ব ৫: পলাশকে খাটের নিচ থেকে খুঁচিয়ে বের করে নৃশংসভাবে খুন করেছিল দুষ্কৃতীরা!

পর্ব ৬: এমএ পাশ অরূপকে অকালে চলে যেতে হয়েছিল শুধুমাত্র বিজেপির বুথ এজেন্ট ছিলেন বলে?

পর্ব ৭: দরিদ্র চাষিকে রাজনৈতিক মত প্রকাশের মূল্য দিতে হয়েছিল নিজের জীবন দিয়ে!

পর্ব ৮: কমিশনের কোর্টে বল ঠেলে ভোট-পরবর্তী হিংসার দায় এড়িয়েছিলেন তিন-তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী!

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের FacebookTwitter এবং Google News পেজ।

Tags:

bjp

Madhyom

tmc

bangla news

Bengali news

Rape

Murder

Postpoll Violence


আরও খবর


খবরের মুভি


ছবিতে খবর