Cope India 2023: কলাইকুন্ডায় শেষ হল ভারত ও মার্কিন বায়ুসেনার যৌথ সামরিক মহড়া, কতটা প্রাপ্তি হল?

জেট ইঞ্জিনের গগনভেদী শব্দ ও আকাশের বুক চিরে উড়ে যাওয়া যুদ্ধবিমানের বিশেষ প্রদর্শনীর মাধ্যমে দিয়ে শেষ হল এরাজ্যে চলা ১৪-দিন ব্যাপী ভারত ও মার্কিন বায়ুসেনার যৌথ সামরিক মহড়া।

গত ১৩ তারিখ থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের কলাইকুন্ডা বায়ুসেনা ঘাঁটিতে শুরু হয়েছিল এই মহড়া। পোশাকি নাম— ‘কোপ ইন্ডিয়া ২০২৩’। এর আগে এই মহড়ার প্রথম ভাগটি শুরু হয়েছিল ১০ তারিখ পশ্চিম বর্ধমানের পানাগড়ে অবস্থিত বায়ুসেনা স্টেশন অর্জন সিং-এ। সেটির সমাপ্তি ঘটেছিল ২১ তারিখ। কলাইকুন্ডায় চলছিল দ্বিতীয় পর্যায়ের মহড়া, যা শেষ হল সোমবার।

কলাইকুন্ডায় মূলত দুদেশের ফাইটার জেট বা যুদ্ধবিমান মহড়ায় অংশ নিয়েছিল। ভারতের তরফে প্রতিনিধিত্ব করেছিল সুখোই সু-৩০এমকেআই, রাফাল, জাগুয়ার ও দেশে তৈরি প্রথম যুদ্ধবিমান তেজস। অন্যদিকে, মার্কিন বায়ুসেনার তরফে অংশ নিয়েছিল এফ-১৫ই স্ট্রাইক ঈগল ও বি-১বি ল্যান্সার।

বস্তুত, এই প্রথমবার এই মহড়ায় অংশ নিল রাফাল, স্বদেশীয় তেজস এবং মার্কিন এফ-১৫ইএক্স। দুদেশের তরফে মোট ৩৪টি যুদ্ধবিমান অংশ নিয়েছিল এই দু-সপ্তাহ ব্যাপী মহড়ায়। অংশগ্রহণ করেছিলেন দুদেশের প্রায় সাড়ে পাঁচশো অফিসার-কর্মী। এর থেকেই প্রমাণিত, কতটা ব্যাপ্তি নিয়ে এই যৌথ মহড়া চলেছে।

শেষ দিন সোমবার সকালে মহড়া শুরু হয় সকাল সোয়া ৯টা নাগাদ। প্রথমেই গগনভেদী শব্দে আকাশের বুক চিরে এক এক করে উড়ে যায় সুখোই, রাফাল, জাগুয়ার, তেজস ও এফ-১৫ই। এর কিছুক্ষণ পর লো ফ্লাই-বাই করে সুখোই। এর পরই, দেখা যায় পাঁচটি বিমানকে ‘ভিক’ ফর্মেশনে ফ্লাই-পাস্ট করতে। পাঁচটি জেট ইঞ্জিনের সেই সমবেত আওয়াজে যেন গোটা কলাইকুন্ডা কেঁপে উঠেছিল।

২০০৪ সাল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই যুদ্ধ মহড়া করছে ভারতীয় সামরিক বাহিনী। বিগত এক দশকে চিন ও পাকিস্তানের মোকাবিলায় ভারত ও আমেরিকার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও মজবুত করেছে। ২০১৬ সালে ভারতকে ‘প্রধান প্রতিরক্ষা সহযোগী’ হিসেবে ঘোষণা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সাম্প্রতিককালে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে একাধিক চুক্তি হয়েছে। অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র ও যুদ্ধবিমান, সশস্ত্র ড্রোন কিনতে আমেরিকার সঙ্গে কয়েক হাজার কোটির চুক্তি হয়েছে ভারতের।

মার্কিন প্রতিনিধিদলের মুখেও শোনা গেল যৌথ সহযোগিতার সেই কথা। মহড়া শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মার্কিন বায়ুসেনার এফ-১৫ই ফাইটার স্কোয়াড্রনের কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল জেন্ডার গিফোর্ড জানান, এবারের মহড়ায় এফ-১৫ ও বি-১বি যুদ্ধবিমানের অংশগ্রহণ গুরুত্ব বহন করে। একসঙ্গে কাজ করার এটা একটা দুর্দান্ত সুযোগ ছিল। একসঙ্গে দুদেশের প্রায় ৩০টির বেশি যুদ্ধবিমান মহড়া করেছে, এটা তাৎপর্যপূর্ণ।

গিফোর্ড বলেন, ভারতীয় বায়ুসেনার সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ করেছি আমরা। উভয় পক্ষই, একে অপরের থেকে অনেক কিছু রপ্ত করেছে। এটাই এই মহড়ার উল্লেখযোগ্য দিক। আমরা একাধিক কৌশল বিনিময় করেছি। চিনের রক্তচক্ষু সম্পর্কে গিফোর্ড জানান, ভারত ও মার্কনি যুক্তরাষ্ট্র— উভয় পক্ষই মুক্ত ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পক্ষে। আঞ্চলিক স্থিতাবস্থা ও নিরাপত্তার স্বার্থে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হল ‘প্রতিরক্ষা সহযোগী’।
