Cope India 2023: পানাগড় ও কলাইকুন্ডায় সামরিক মহড়ায় ভারত ও মার্কিন বায়ুসেনা, কেন তাৎপর্যপূর্ণ?

চিনের মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা একাধিকবার বলে এসেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন ভালো মতোই জানে যে, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনা আগ্রাসনের পাল্টা কেউ যদি দিতে সক্ষম হয়ে থাকে, সে হল ভারত।

তার জন্যই ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে (Cope India 2023) ভারতকে পাশে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে হোয়াইট হাউস। যে কারণে, ২০১৬ সালে ভারতকে ‘প্রধান প্রতিরক্ষা সহযোগী’ হিসেবে ঘোষণা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

সামরিক সহযোগিতা ও পারস্পরিক বোঝাপড়া বাড়াতে দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যুদ্ধ মহড়া করে আসছে ভারত। তেমন ভাবেই ২০০৪ সাল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধ মহড়া করছে ভারতীয় সামরিক বাহিনী।

তবে সাম্প্রতিক অতীতে, ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে এই মহড়ায় অংশ নিতে বিপুল উৎসাহ ও উদ্যোগ দেখিয়েছে আমেরিকা। এধরনের যুদ্ধ মহড়ায় তারা ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন নতুন সামরিক কৌশল থেকে শুরু করে তথ্য ও অত্যাধুনিক সামরাস্ত্রের ব্যবহার ও কার্যপ্রক্রিয়া ভাগ করে নিয়েছে।

চলতি মাসের গোড়ায় অরুণাচল প্রদেশে চিন সীমান্তের কাছে শেষ হয়েছে ভারত-মার্কিন কমান্ডো বাহিনীর বিশেষ মহড়া। এবার ভারত-মার্কিন বায়ুসেনার যুদ্ধ মহড়া (Cope India 2023) চলছে ভারতে, বলা ভালো পশ্চিমবঙ্গে।

পোশাকি নাম — ‘কোপ ইন্ডিয়া ২০২৩’। গত ১০ তারিখ থেকে পশ্চিম বর্ধমানের পানাগড় ও পশ্চিম মেদিনীপুরের কলাইকুন্ডায় শুরু হয়েছে এই দুই পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রের আকাশপথে যুদ্ধ-মহড়া (Cope India 2023)। চলবে ২৪ তারিখ পর্যন্ত।

এবারের এই মহড়া অনেক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ঠিক এক সপ্তাহ আগেই শেষ হয়েছে তাইওয়ানের জল-সীমান্তের কাছে চিনের তিন দিন ব্যাপী সামরিক মহড়া। তাইওয়ান উপকূলের কাছে নিজেদের পেশী-শক্তি দেখিয়েছে ড্রাগনের দেশ।

তার ওপর কিছুদিন আগেই, অরুণাচলের কয়েকটি জায়গার নাম বদলের ঘোষণা করেছে চিন, যা নিয়ে দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে নতুন চাপানউতরের সৃষ্টি হয়েছে। তাই এসবের মধ্যে চিনকে বার্তা দিতে মার্কিন ও ভারতীয় বায়ুসেনা এই মহড়া চালাচ্ছে বলে মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা।

তাঁদের এই ভাবনা যে অমূলক নয়, তার একটা বড় কারণ হল এবারের মহড়ায় মার্কিন সেনা এমন এক জোড়া বিমান মার্কিন বায়ুসেনা এনেছে, যা এই মহড়ার (Cope India 2023) তাৎপর্য অনেকটাই বাড়িয়ে তুলেছে।

এই প্রথম ভারতের সঙ্গে সামরিক মহড়ায় অংশ নিয়েছে মার্কিন বায়ুসেনার স্ট্র্যাটেজিক বম্বার বা বোমারু বিমান ‘বি-১বি ল্যান্সার’। বিমানের কোডনেম- ‘বোন’। বাংলায় অর্থ হাড়।

চলতি মহড়ায় অন্যান্য যুদ্ধবিমান ছাড়াও দুটি ‘বি-১বি ল্যান্সার’ বোমারু বিমানের সঙ্গে হাজির হয়েছে মার্কিন প্রতিনিধি দল। বি-১বি হল একটি সুপারসনিক (শব্দের চেয়ে দ্রুতগতি সম্পন্ন) দূরপাল্লার মাল্টি-মিশন বম্বার।

এর আগে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে এরো ইন্ডিয়া শো-তে দেখা গিয়েছিল ল্যান্সার বিমানকে। সঙ্গে এসেছিল মার্কিন এফ-৩৫ ও এফ-১৬ যুদ্ধবিমানও। সেবার প্রথম কোনও ল্যান্সার ভারতের মাটি ছুঁয়েছিল। তবে, সেবার তারা শুধুমাত্র ভারতের আকাশে চক্কর কেটেছিল।

এই প্রথমবার বোমারু বিমানগুলি ভারতে কোনও সামরিক মহড়ায় (Cope India 2023) অংশ নিল। ২০০৪ সাল থেকে দুদেশের সামরিক মহড়া শুরু হওয়া ইস্তক, ভারতে এসেছে মার্কিন এফ-১৫ই স্ট্রাইক ঈগল, এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন, সি-১৩০এইচ, সি-১৩০জে সুপার হারকিউলিস ও সি-১৭ গ্লোবমাস্টার ৩।

তবে, এবার ল্যান্সার আসায় এই মহড়ার ধার ও ভার অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সঙ্গে দোসর এমসি-১৩০জে কমান্ডো-২ পণ্যবাহী বিমান। এই বিমানে করে এই মহড়ায় অংশ নিতে ভারতে এসেছে মার্কিন এয়ার ফোর্সের কমান্ডোরা।

এবারের এই মহড়া (Cope India 2023) দুটি পর্যায়ে ভাগ হয়ে হচ্ছে। প্রথম পর্যায় শুরু হয়েছে ১০ এপ্রিল পানাগড়ের এয়ার ফোর্স স্টেশন অর্জন সিং-এ। তাতে অংশ নিয়েছে উভয় দেশের সি-১৩০জে, ও সি-১৭ সামরিক পণ্যবাহী বিমানগুলি।

এছাড়া, রয়েছে মার্কিন এমসি-১৩০জে বিমানও। এই পর্যায়ে, এয়ার মবিলিটি ও এয়ার ড্রপ সংক্রান্ত বিভিন্ন অনুশীলন ও মহড়া সম্পন্ন হয়েছে। এই সময়ে ভারতীয় বায়ুসেনাকে ‘কম খরচে কম উচ্চতা’ এয়ারড্রপের একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয় মার্কিন অতিথিরা। এই পর্যায়টি শেষ হচ্ছে ২১ তারিখ।

অন্যদিকে, কলাইকুন্ডা এয়ার ফোর্স স্টেশনে ১৩ তারিখ থেকে শুরু হওয়া দ্বিতীয় পর্যায়ে অংশ নিয়েছে মার্কিন এফ-১৫ই ও বি-১বি যুদ্ধবিমানগুলি। প্রচণ্ড গরমের ফলে, রাত্রিকালীন মহড়ায় জোর দেওয়া হয়েছে। এখানে এয়ার কমব্যাট সংক্রান্ত বিভিন্ন কৌশলের আদান-প্রদান হচ্ছে।

ভারতীয় বায়ুসেনার তরফে এই মহড়ায় (Cope India 2023) অংশ নিয়েছে সুখোই সু-৩০এমকেআই, রাফাল, তেজস ও জাগুয়ার যুদ্ধবিমান। এছাড়া রয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনার মিড-এয়ার রিফুয়েলার, এইডব্লুঅ্যান্ডসি ও অ্যাওয়াকস নজরদারি বিমান। এই পর্যায়টি শেষ হবে ২৪ তারিখ।
