img

Follow us on

Wednesday, May 15, 2024

Post Poll Violence: পলাশকে খাটের নিচ থেকে খুঁচিয়ে বের করে নৃশংসভাবে খুন করেছিল দুষ্কৃতীরা!

দোষ একটাই ছিল, উনি বিজেপির পতাকা-পোস্টার লাগাতেন এবং মিটিং-মিছিলে যেতেন, অভিযোগ এমনই

img

নিহত পলাশ মণ্ডলের বাড়িতে তদন্তে সিবিআই টিম। ফাইল চিত্র

  2023-05-05 18:32:42

ঠিক দু-বছর আগের কথা। ২০২১ সালের ২ মে। কোভিড দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রাজ্যে। কিন্তু তাতে কী। শাসক তৃণমূল তখন ফের 'মধুভাণ্ড' ফিরে পাওয়ার নেশায় বুঁদ। ভোটের ফলে যখন পরিষ্কার হয়ে গেল, তৃতীয়বারের জন্য মসনদের দখলদারি তাদের হাতেই থাকছে, তখনই যেন বেরিয়ে পড়ল নখ-দন্ত। বিরোধীদের অভিজ্ঞতা অন্তত তেমনটাই। তাদের অভিযোগ, বিজয়োল্লাসের নামে শুরু হয়ে গেল প্রতিপক্ষকে 'টাইট' দেওয়ার কাজ। তাদের স্মৃতিতে ভাসছে, চটুল গান, অশ্রাব্য গালিগালাজ, অভব্য অঙ্গভঙ্গি, রাস্তার দোকানে ভাঙচুর এবং বিরোধী দলের কর্মীদের প্রতি হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড-কিছুই বাদ যায়নি। ভয়ঙ্কর সেইসব ঘটনা নিয়েই আমাদের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের পঞ্চম পর্ব।

 

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: গণতন্ত্র, সাংবিধানিক অধিকার, মানবাধিকারের চূড়ান্ত কালা অধ্যায় ছিল ভোট-পরবর্তী মাসগুলি। এমনটাই মনে করেন বিরোধীরা। তা না হলে কৃষ্ণনগরের অত্যন্ত সাধারণ এবং সামান্য দিনমজুর পলাশ মণ্ডলকে কেবলমাত্র বিজেপিকে সমর্থন করা এবং নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার জন্য দুষ্কৃতীদের হাতে নৃশংসভাবে খুন (Post Poll Violence) হতে হয়!

কে এই পলাশ মণ্ডল? কীভাবে খুন করা হয়েছিল তাঁকে?

পলাশ মণ্ডলের জন্ম ১৯৭৬ সালের ২ জুন এবং মৃত্যু হয় ২০২১ সালের ১৪ জুন। বাড়ি কৃষ্ণনগরের মনীন্দ্রপল্লি, বারইহুদায়। বিজেপির একজন সাধারণ কর্মী ছিলেন। ঘটনার একদিন আগে রাত এগারোটা নাগাদ আচমকা হামলা করে খুনের হুমকি দিয়ে গিয়েছিল তৃণমূলের গুন্ডারা, এমনটাই পরিবারের অভিযোগ। ঘটনার দিন ভোর সাড়ে পাঁচটায় গুন্ডারা বাড়িতে ঢুকে দরজায় প্রথমে আঘাত করে। তারপর খুলতে না পেরে উপরের টিন কেটে রড, দা, কাঁচি, চাকু, তলোয়ার ইত্যাদি নিয়ে হামলা (Post Poll Violence) চালায়। দলে তারা ছিল প্রায় ২০০ জন। বাড়িতে টিভি, বাসনপত্র, শাড়ি, গয়না আসবাবপত্র লুট করে গুন্ডারা। সেই সঙ্গে ধারালো অস্ত্র দিয়ে বাড়ির দেওয়ালে কোপ দেয়। ভয়ে পলাশ নিজের জীবন বাঁচাতে ঘরের খাটের নীচে আশ্রয় নেন। কিন্তু হিংস্র গুন্ডারা ঘরে ঢুকে রড দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারতে মারতে খাটের নিচ থেকে বের করে তাকে। এরপর ঘর থেকে বের করে বাঁশ দিয়ে আঘাত করে এবং পরে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে রাস্তায় ফেলে কানের কাছে গুলি করে পালিয়ে যায়। পরে শক্তিনগর হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত বলে ঘোষণা করে ডাক্তার। উল্লেখ্য, সবটাই পলাশবাবুর দুই মেয়ে এবং স্ত্রীর সামনে ঘটে। স্ত্রী শেফালি মণ্ডল কৃষ্ণনগর থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেন।
এত নির্মমভাবে হত্যা (Post Poll Violence) করা হয় যে আশপাশের মানুষ বাঁচানোর সাহস করেনি। পরিবারের অভিযোগ ছিল, পলাশবাবুর দোষ একটাই ছিল, উনি বিজেপির পতাকা-পোস্টার লাগাতেন এবং বিজেপির মিটিং-মিছিলে যেতেন। বাড়ির দেওয়ালে তারপরেও ছিল রক্তের দাগ। দরজায় ছিল দা দিয়ে বড় বড় কোপের দাগ। পলাশবাবু গেঞ্জির রিপ কাটার কাজ করতেন। ঘটনার দিন খুন করে আততায়ীরা রিপকাটার মেশিনটিও তুলে নিয়ে চলে যায়।

পরিবার ঘরছাড়া, দিন কেটেছে অসহায় অবস্থায়

পরিবারে উপার্জনের একটা বড় দায়িত্ব ছিল পলাশের উপর। পলাশবাবুর মেয়ে পম্পা মণ্ডল তখন দশম ক্লাসের ছাত্রী। শক্তিনগর গার্লস স্কুলে পড়াশুনা করত। স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী কলকাতায় গিয়ে মানুষের বাড়িতে কাজ করে কোনওরকমে সংসার চালাতেন। পলাশবাবুর মায়ের কথা সূত্রে জানা গিয়েছিল, তাঁরা পূর্ববঙ্গের ফরিদপুরের বাসিন্দা ছিলেন। দেশ ছেড়ে এসে ছেলেকে এইভাবে মরতে হবে, কেউ ভাবতে পারেননি। শুধু খুন (Post Poll Violence) করেই আততায়ীরা ক্ষান্ত হয়নি। এলাকায় বাড়ি থেকে রাস্তায় বের হলে অপরাধীদের আত্মীয়রা প্রভাতী দেবনাথ, মাম্পী দেবনাথ, মান্তু দেবনাথ রোজ হুমকি দিয়ে যেত বলে অভিযোগ। গালিগালাজ এবং লোক লাগিয়ে মেয়েকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করবে বলেও হুমকি চলেছিল প্রতিনিয়ত।

সিবিআই তদন্ত চলছে, বিচার সময়ের অপেক্ষা

বর্তমানে ওই হত্যার (Post Poll Violence) তদন্ত সিবিআই করছে। প্রধান অভিযুক্ত হল আজাহার শেখ, কুষাই দাস, পাপ্পু মুখার্জি, বলরাম দাস, অপু দেব, বাবু সোনা মুখার্জি, আনন্দ সরকার, হারান চাকি, হুদা চাকি, অখিল ভৌমিক, সুরেষ পারসি, তাপস দেবনাথ। অনেকেই গ্রেফতার হয়েছে। তৎকালীন তৃণমূলের কাউন্সিলর নিত্য প্রামাণিকের পরোক্ষ ইন্ধন আছে বলে পরিবারের অভিযোগ। তদন্ত এখনও চলছে। হত্যার বিচার এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র।

পর্ব ১: গলায় সিসিটিভি-র তার পেঁচিয়ে, পাথর দিয়ে থেঁতলে খুন করা হয়েছিল অভিজিৎ সরকারকে!

পর্ব ২: ৩--৪ মাসে খুন ৬২ জন, দুষ্কৃতীরা ছাড়েনি অন্তঃসত্ত্বাকেও!

পর্ব ৩: ৪০ হাজার ঘরবাড়িতে লুটপাট, এক লক্ষ পরিবার ঘরছাড়া, হামলা চলেছিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কনভয়েও!

পর্ব ৪: ছেলে বিজেপি করে, এই 'অপরাধে'ই কি নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছিল মাকে!

পর্ব ৬: এমএ পাশ অরূপকে অকালে চলে যেতে হয়েছিল শুধুমাত্র বিজেপির বুথ এজেন্ট ছিলেন বলে?

পর্ব ৭: দরিদ্র চাষিকে রাজনৈতিক মত প্রকাশের মূল্য দিতে হয়েছিল নিজের জীবন দিয়ে!

পর্ব ৮: কমিশনের কোর্টে বল ঠেলে ভোট-পরবর্তী হিংসার দায় এড়িয়েছিলেন তিন-তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী!


দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।

Tags:

bjp

Madhyom

tmc

post poll violence

bangla news

Bengali news

Murder


আরও খবর


খবরের মুভি


ছবিতে খবর