img

Follow us on

Wednesday, May 15, 2024

Post Poll Violence: দরিদ্র চাষিকে রাজনৈতিক মত প্রকাশের মূল্য দিতে হয়েছিল নিজের জীবন দিয়ে!

অভিযোগ, বিজেপি করার জন্য সরকারি সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল এই পরিবার। দোষ একটাই, কেন বিজেপি করবে?

img

ভোট পরবর্তী হিংসার ফাইল চিত্র।

  2023-05-05 17:42:37

ঠিক দু-বছর আগের কথা। ২০২১ সালের ২ মে। কোভিড দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রাজ্যে। কিন্তু তাতে কী। শাসক তৃণমূল তখন ফের 'মধুভাণ্ড' ফিরে পাওয়ার নেশায় বুঁদ। ভোটের ফলে যখন পরিষ্কার হয়ে গেল, তৃতীয়বারের জন্য মসনদের দখলদারি তাদের হাতেই থাকছে, তখনই যেন বেরিয়ে পড়ল নখ-দন্ত। বিরোধীদের অভিজ্ঞতা অন্তত তেমনটাই। তাদের অভিযোগ, বিজয়োল্লাসের নামে শুরু হয়ে গেল প্রতিপক্ষকে 'টাইট' দেওয়ার কাজ। তাদের স্মৃতিতে ভাসছে, চটুল গান, অশ্রাব্য গালিগালাজ, অভব্য অঙ্গভঙ্গি, রাস্তার দোকানে ভাঙচুর এবং বিরোধী দলের কর্মীদের প্রতি হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড-কিছুই বাদ যায়নি। ভয়ঙ্কর সেইসব ঘটনা নিয়েই আমাদের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের সপ্তম পর্ব।

 

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: নিজের পছন্দের রাজনৈতিক দলকে ভোট দিয়েছিলেন। অভিযোগ, ফলাফল ঘোষণার পর স্থানীয় শাসকদলের মদতপুষ্ট মস্তানদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জখম হন (Post Poll Violence)। কিন্তু পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা এবং অবহেলায় বাঁচানো যায়নি ধর্ম মণ্ডলকে। নদিয়ার চাপড়া, হৃদয়পুর সীমান্তের বাসিন্দা। মূলত চাষাবাদ করতেন। বিজেপির সক্রিয় সদস্য এবং কর্মী ছিলেন। ছয় বছর ধরে পার্টি করতেন বলে জানা যায়। বিজেপি করার জন্য সরকারি সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল এই পরিবার। দোষ একটাই, কেন বিজেপি করবে?

হত্যার প্রেক্ষাপট

পরিবারের অভিযোগ, বিজেপি করার জন্য তৃণমূলের গুন্ডারা বাড়ি থেকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা বাবদ আদায় করে নিয়ে যায় ফলাফল বের হওয়ার আগেই। ধর্ম মণ্ডলকে অনেকদিন ধরেই হুমকি দেওয়া হচ্ছিল, বিজেপি ছেড়ে যেন তৃণমূলে যোগদান করে। ঝগড়া হলেই তৃণমূলের দুই মাতব্বর হুমকি দিত, ভোট মিটলেই দেখে নেব (Post Poll Violence)। সারাদিন মাঠে কাজকর্ম করার পর সন্ধ্যায় চায়ের দোকানে গেলে তৃণমূলের গুন্ডারা রীতিমতো হুমকি দিত। 

পুলিশ ছিল কাছেই, তবুও খুন!

পরিবার সূত্রে জানা যায়, ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর বাড়ি থেকে দোকানের কাছে পাকা রাস্তায় যেতেন না ধর্ম মণ্ডল। কারণ, একটা আতঙ্ক কাজ করত, উনি বিজেপি করতেন বলে। ঈদের দিন ছিল ১৪ মে। চাষের জমিতে ধর্মবাবু গরুর জন্য ঘাস তুলতে যান। ঠিক দুপুর সাড়ে ১২ টায় বাড়ির লিচুবাগানে তৃণমূল সমর্থক প্রায় ২০ জন মিলে ধর্ম মণ্ডলের ভাই সঞ্জিতকে আক্রমণ করে। ধর্ম মণ্ডলের ভাইকে মস্তানরা বাঁশ দিয়ে মেরে হাত ভেঙে দেয়। পরিস্থিতি বুঝে থানায় গিয়ে অভিযোগ জানান স্থানীয় এক ব্যক্তি। ঠিক সেই সময় ধর্ম মণ্ডল বাঁচাতে যান ভাইকে। আর তখনই ধর্ম মণ্ডলকেও রড দিয়ে আঘাত করে দুষ্কৃতীরা। আটকাতে গেলে ধর্মবাবুর স্ত্রীকে লাথি মেরে দূরে ঠেলে ফেলে দেওয়া হয়। ধর্ম মণ্ডলের স্ত্রী পা ধরে মাফ চান। কিন্তু নির্মম কসাইদের মনে কোনও দয়ার ছাপ ছিল না। উজ্জ্বল নামে একজন একটা বড় দা দিয়ে ধর্ম মণ্ডলকে কোপ দেয় (Post Poll Violence)। সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত কালু মস্তান বলে, একেবারে শেষ করে দে! উল্লেখ্য, ঘটনাস্থলের সামান্য দূরেই পুলিশ এসে উপস্থিত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু পুলিশ ছিল নীরব দর্শক। পরে আহত ধর্মবাবুকে গাড়িতে করে প্রথমে বাঙ্গালঝী, তারপর শক্তিনগর এবং পরবর্তীতে কলকাতায় নীলরতন সরকার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসার জন্য। কিন্তু রক্তক্ষরণ এতই হয়েছিল যে শেষরক্ষা হয়নি।

তদন্তে সিবিআই, ন্যায় বিচারের অপেক্ষায় পরিবার

আতঙ্কিত পরিবার ঘটনার প্রায় দু দিন পর চাপড়া থানায় অভিযোগ জানানোর চেষ্টা করে। কিন্তু লাভ হয়নি। ধর্ম মণ্ডলের স্ত্রী-ছেলের কোনও অভিযোগ জমা নেয়নি পুলিশ। ঘটনার সমস্ত ভিডিও মোবাইল থেকে পুলিশ জোর করে নিয়ে নেয়। সমস্ত ঘটনাটি পুলিশের উপস্থিতিতে ঘটে বলে পরিবারের দাবি। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে মামলা দায়ের করা হয় এবং তদন্ত সিবিআই করবে, আদেশ দেয় হাইকোর্ট। খুনে প্রধান অভিযুক্ত হল লাল্টু ঘোষ (তৃণমূলের যুব সভাপতি) কালু শেখ, কিংকর মণ্ডল, বিজয় শেখ, পিন্টু ঘোষ, আবুল শেখ, আলমগীর শেখ, ভগীরথ দাস, গণেশ মণ্ডল এবং আরও অনেকে। অভিযুক্তদের মোট ১৮ জন ধরা পড়ে এবং চারজন পলাতক ছিল। সিবিআই প্রথমদিন তদন্ত করতে গেলে তাদের উপর হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা, গাড়িতেও ভাঙচুর (Post Poll Violence) করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। বর্তমানে তাঁর স্ত্রী ছেলে-বৌমাকে নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। ন্যায় এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র। 

 

পর্ব ১: গলায় সিসিটিভি-র তার পেঁচিয়ে, পাথর দিয়ে থেঁতলে খুন করা হয়েছিল অভিজিৎ সরকারকে!

পর্ব ২: ৩-৪ মাসে খুন ৬২ জন, দুষ্কৃতীরা ছাড়েনি অন্তঃসত্ত্বাকেও!

পর্ব ৩: ৪০ হাজার ঘরবাড়িতে লুটপাট, এক লক্ষ পরিবার ঘরছাড়া, হামলা চলেছিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কনভয়েও!

পর্ব ৪: ছেলে বিজেপি করে, এই 'অপরাধে'ই কি নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছিল মাকে!

পর্ব ৫: পলাশকে খাটের নিচ থেকে খুঁচিয়ে বের করে নৃশংসভাবে খুন করেছিল দুষ্কৃতীরা!

পর্ব ৬: এমএ পাশ অরূপকে অকালে চলে যেতে হয়েছিল শুধুমাত্র বিজেপির বুথ এজেন্ট ছিলেন বলে?

পর্ব ৮: কমিশনের কোর্টে বল ঠেলে ভোট-পরবর্তী হিংসার দায় এড়িয়েছিলেন তিন-তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী!

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।

Tags:

bjp

Madhyom

tmc

post poll violence

bangla news

Bengali news

Murder


আরও খবর


খবরের মুভি


ছবিতে খবর