ভূপতিনগরে তৃণমূল নেতার বাড়িতেই ঘটেছিল বিস্ফোরণ, তারপর কী হয়েছিল জানেন?
বিস্ফোরণের পর তৃণমূল নেতার ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি (নিজস্ব চিত্র)
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথিতে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা ছিল। ঠিক তার আগের রাতে ২ ডিসেম্বর সভাস্থল থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত তৃণমূলের বুথ সভাপতি রাজকুমার মান্নার বাড়ি বিস্ফোরণে উড়ে যায়। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ কাঁথির ভগবানপুর-২ ব্লকের ভূপতিনগর (Bhupatinagar Blast) থানার অর্জুননগর গ্রাম পঞ্চায়েতের নাড়ুয়াবিলা গ্রামে বিস্ফোরণ ঘটে। তাতে মৃত্যু হয় রাজকুমার-সহ তিন জনের। যদিও বাড়ি থেকে ওই তিনজনের দেহ উদ্ধার করা হয়নি।
পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিস্ফোরণে (Bhupatinagar Blast) মৃত্যু হয় তৃণমূলের বুথ সভাপতি রাজকুমার মান্না ও তাঁর দুই ভাই বিশ্বজিৎ গায়েন ও বুদ্ধদেব মান্না ওরফে লালু। চাঞ্চল্যকর দাবি করেছিলেন নিহত তৃণমূল নেতার স্ত্রী লতা মান্না। তিনি বলেছিলেন, ঘটনার পরই কয়েকজন পরিচিত ব্যক্তি তাঁদের বাড়িতে এসেছিলেন। তাঁরাই দেহ বাড়ি থেকে বার করে নিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু, কোথায় নিয়ে গিয়েছেন, তা জানেন না। পরদিন বাড়ি থেকে দেড় কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে পৃথক তিন জায়গা থেকে তিনজনের ঝলসানো মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। বোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণ ঘটে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে বলে গোড়া থেকে অভিযোগ করছে বিজেপি নেতৃত্ব। তা নিয়েই সন্দেহ দানা বাঁধে। প্রশ্ন ওঠে, তবে কি মৃতদেহ লোপাটের চেষ্টা করা হচ্ছিল? আর কেউ আহত কিংবা মারা গেছেন কি না, তা নিয়েও তৈরি হয় ধোঁয়াশা।
আরও পড়ুন: "মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই এনআইএ-র উপর হামলা হয়েছে", ভূপতিনগরের ঘটনায় সরব সুকান্ত-শুভেন্দু
এনআইএ তদন্তের দাবি তোলে বিজেপি। চিঠি লেখা হয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে। ভূপতিনগর বিস্ফোরণ (Bhupatinagar Blast) কাণ্ডে এনআইএ তদন্ত চেয়ে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বসুর সঙ্গে দেখা করেন ভগবানপুরের বিজেপি বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ মাইতি। কেন্দ্রীয় তদন্তের দাবি জানিয়ে জনস্বার্থ মামলা হয় কলকাতা হাইকোর্টে। প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন আইনজীবী অনিন্দ্যসুন্দর দাস। মামলাকারীদের অভিযোগ, ঘটনার পর থেকে কয়েকদিন কেটে গেলেও সেখানে ফরেনসিক দল পৌঁছয়নি। তার ফলে প্রমাণ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ঘটনার তদন্তভার দেওয়া হোক এনআইএ–কে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বিস্ফোরণের ঘটনার এনআইএ তদন্তের দাবি জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লিখেছিলেন।
২০২৩ সালের জুন মাসে ওই ঘটনার তদন্তভার এনআইএ-কে দেয় হাইকোর্ট। বিস্ফোরণের ঘটনার তদন্তে চলতি বছরের মার্চ মাসে ৮ তৃণমূল নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে ডেকে পাঠায় এনআইএ। কলকাতার এনআইএ দফতরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে তাঁদের ডেকে পাঠানো হয়। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মানবকুমার পয়রা, স্থানীয় তৃণমূল নেতা সুবীর মাইতি-সহ মোট ৮ জনকে তলব করা হয়। যদিও তাঁরা কেউ হাজিরা দেননি। এর আগে ৩ জনকে তলব করা হয়েছিল। যদিও তাঁরাও হাজিরা দেননি। সেই ঘটনার তদন্তে এবার পূর্ব মেদিনীপুরের ভূপতিনগরে (Bhupatinagar Blast) গিয়ে আক্রান্ত হল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী এজেন্সি এনআইএ। ভূপতিনগর বিস্ফোরণ মামলায় তদন্তে গিয়েছিলেন এনআইএর-র তদন্তকারীদের একটি দল। সেই দলের ওপরেই হামলা হয়েছে। তদন্তকারীদের গাড়ি ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ। জানা গিয়েছে দুই ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে নিয়ে যাওয়ার সময়েই হামলা হয়। ওই ব্যক্তিকে ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছিলেন এলাকার বাসিন্দারা। হামলার ঘটনায় দুই এনআইএ আধিকারিক আহত হয়েছেন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।