বাংলায় স্লিপার সেল!ঘরের পাশেই জঙ্গি?
পশ্চিমবঙ্গ কিভাবে হয়ে উঠল জঙ্গিদের নিশ্চিন্ত আস্তানা? খাগড়াগড় কাণ্ড থেকে একের পর এক যেভাবে এ রাজ্যে জঙ্গি যোগ ধরা পড়ছে, তাতে এ প্রশ্ন স্বাভাবিক ভাবেই উঠে আসছে। গোয়েন্দা তথ্য বলছে, সন্ত্রাসবাদীরা এই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ঘাঁটি গেড়েছে। গোপনে চলছে আন্তর্জাতিক জঙ্গি চক্র। বর্ধমানের খাগড়াগড় থেকে দুর্গাপুরের কাঁকসা, উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট, বাদুড়িয়া, শাসন থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর, ডায়মন্ড হারবার। কখনও বাইরে থেকে এখানে আশ্রয় নিয়েছে জঙ্গিরা। কখনও আবার এখানকার ভূমিপুত্রের যোগসাজশ পাওয়া গেছে অন্যত্র। হুগলির আরামবাগ থেকে দশঘরা, কিংবা হাওড়া সদর থেকে বাঁকড়া। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে সন্দেহভাজন জঙ্গিদের। তাদের কাছ থেকে মিলছে লস্কর এ তৈবা, আল কায়েদা থেকে বাংলাদেশের জেএমবির নানা গেজেট। রাজ্যের এই জঙ্গি মানচিত্রে জায়গা করে নিয়েছে উত্তর দিনাজপুর, মালদা, মুর্শিদাবাদ, থেকে পুরুলিয়াও। বাদ যাচ্ছে না কলকাতার পার্ক স্ট্রিট থেকে খিদিরপুর চত্বর।
সম্প্রতি হাওড়া থেকে যে দুজন সন্দেহভাজন আইসিস জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের কার্যকলাপের নমুনা দেখে মাথা ঘুরে গেছে গোয়েন্দাদের। এই দুজনই হাওড়া থেকে খিদিরপুর যাচ্ছিল গোপন বৈঠক করতে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রে খবর পেয়েই সৈয়দ আহমেদ ও সাদ্দাম নামের ওই দুই যুবককে গ্রেফতার করে এসটিএফ। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ল্যাপটপ ও মোবাইল থেকে প্রচুর নথি পাওয়া গেছে।মিলেছে জিহাদি কাজের নানা ডিজিটাল কনটেন্ট। অর্থাৎ তাদের উদ্দেশ্য ছিল জিহাদি কার্যকলাপ ছড়িয়ে দেওয়ার। এদের মধ্যে সৈয়দ আহমেদ আবার এম টেকের ছাত্র। মেধাবী ছাত্র হয়েও কীভাবে এই পথে পা বাড়াচ্ছে রাজ্যের কিছু যুবক, তা যথেষ্ট ভাবাচ্ছে গোয়েন্দাদের।
প্রথমেই আসি খাগড়াগড়ের কথায়। ২০১৪ সাল। অষ্টমীর সকাল। সারা বাংলা মেতে দুর্গাপুজোয়। বর্ধমান শহর লাগোয়া খাগড়াগড়ে ভয়াবহ বিস্ফোরণ। বোমা বাঁধতে গিয়ে দুই জঙ্গির মৃত্যু। প্রথমে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের তরফে ঘটনা চেপে দেওয়ার চেষ্টা হয়। নিছক বোমা ফাটার ঘটনা বলে চাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়। পরে তদন্তে নামে এনআইএ। উঠে আসে বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন জেএমবি বা জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের নাম। জানা যায়, খাগড়াগড় বিস্ফোরণের মূল চক্রী কউসর। বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে এ রাজ্যে আশ্রয় নিয়েছিল সে। বিস্ফোরণের পর পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। মাঝে আস্তানা গেড়েছিল হাওড়ার সাঁকরাইল থেকে কলকাতার মেটিয়াবুরুজে। একবার তাকে একটুর জন্য হাতছাড়া করে গোয়েন্দারা। শেষে ধরা পড়ে বেঙ্গালুরুতে। কউসরের দুই সাগরেদ ধরা পড়ে আরামবাগ থেকে। এদের একজন আবার বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণ কাণ্ডে জড়িত ছিল। রাজমিস্ত্রির ছদ্মবেশে লুকিয়ে ছিল আরামবাগে। খাগড়াগড় মামলায় মোট ৩১ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত।
হুগলির এই আরামবাগেরই ছেলে কাজি আহসন উল্লাহ। এখানের সামতা গ্রামেই ছোট থেকে বেড়ে ওঠা। পড়াশোনা। তবে এই আহসনের সঙ্গেই আল কায়েদার যোগ খুঁজে পায় পুলিশ। উত্তর ২৪ পরগনার খড়িবাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করে এসটিএফ। উদ্ধার হয় প্রচুর গুরুত্বপূর্ণ নথি। এই হুগলির ধনেখালিতেও মেলে জঙ্গি যোগ। ২০১৮ সালে এখান থেকেই আয়েশা জন্নত মোহনা নামে একটি মেয়ে পালায় বাংলাদেশে। তাকে পরে গ্রেফতার করে বাংলাদেশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। জানা যায়, আয়েশা সঙ্গে যোগ আছে ইসলামিক স্টেটের। জঙ্গি যোগ পাওয়া যায় হুগলির দশঘড়াতেও। ২০১৬ সালে দুর্গাপুরের কাঁকসার ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র আশিক আহমেদকে গ্রেফতার করে এনআইএ। আশিকের বাড়ি ছিল দশঘরায়। তার সঙ্গেও আইএসের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল বলে জানিয়েছিল গোয়েন্দারা।
হুগলির পর উত্তর ২৪ পরগনা। বাদুড়িয়া। জঙ্গি যোগের অভিযোগে সামনে আসে সদ্য স্নাতক তানিয়া পরভিনের নাম। হিন্দি, ইংরেজির পাশাপাশি আরবি, উর্দুতেও চোস্ত। প্রেমের ফাঁদ পাততে বিশেষ দক্ষ। তাকে কাজে লাগাতো পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই থেকে শুরু করে লস্করের মতো জঙ্গি সংগঠন। ওই তরুণীকে কাজে লাগিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ভিতরের খবর জোগাড়ের চেষ্টা চালাচ্ছিল আইএসআই। ২০২০ সালের মার্চে সামনে আসে এই তথ্য। গত বছরই শাসন থেকে দুই যুবককে গ্রেফতার করে এসটিএফ। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় জেহাদি বইপত্র।
উত্তর ২৪ পরগনার পাশাপাশি দক্ষিণেও যে জঙ্গি যোগ ছড়িয়ে আছে, তা বারবার সামনে এসেছে। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসেই মথুরাপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় বছর কুড়ির মনিরুদ্দিন খানকে। ওই যুবক এবিটি বা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য। এরা আল কায়েদার শাখা সংগঠন। ভারত নেপাল সীমান্ত দিয়ে পালানোর সময় ধরা পড়ে মনিরুদ্দিনের সঙ্গে যুক্ত আর এক যুবক মোহম্মদ আফতাব। বিস্ফোরক তৈরির প্রশিক্ষণ দিত সে। আরও দুই জঙ্গির সঙ্গে হাওড়ার একটি লড়ে ভাড়া ছিল সে।
গোয়েন্দাদের কাছে একটা জিনিস স্পষ্ট। দ্বিতীয় হুগলি সেতুকে কাজে লাগিয়ে একদিকে হাওড়া অন্যদিকে খিদিরপুর চত্বরে জঙ্গি কার্যকলাপের একটা করিডর তৈরি হয়েছে। ২০২২ সালেই হাওড়ায় এসটিএফের হাতে ধরা পড়ে আনিরুদ্দিন আনসারি নামে এক স্কুল শিক্ষক। বাঁকড়া থেকে তাকে ধরে পুলিশ। জেএমবি জঙ্গিদের আশ্রয় দিত সে। জানা গেছে, ধৃতের বাড়ির পুরুলিয়ার পারায়। বাঁকড়ায় ভাড়া থাকত সে। তবে এর সঙ্গে পুরুলিয়ার নাম উঠে আসায় এটা স্পষ্ট, ওই এলাকাতেও জঙ্গি কার্যকলাপ বিক্ষিপ্ত ভাবে চলছে।
মালদা ও মুর্শিদাবাদেও যে জেএমবি জঙ্গিদের অবাধ আনাগোনা আছে, তাও সামনে এসেছে। গত বছরই মালদা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে আব্দুল বারি ও নাজিমুদ্দিন খান নামে দুই জেএমবি জঙ্গিকে। তাদের কাছ থেকে পেনড্রাইভ ও ল্যাপটপ বাজেয়াপ্ত হয়েছে। উত্তর দিনাজপুরের মডিউলের দুই মাথা ছিল তারা।
আল কায়েদা যোগে কিছুদিন আগেই সামনে এসেছিল দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরের নাম। মাদ্রাসায় পড়াতে গিয়ে জঙ্গিদের সঙ্গে যোগসাজশ গড়ে ওঠে এখানকার আব্দুল রাকিবের। তার কাছ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার হয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদের বেশ কয়েকটি মাদ্রাসাকে ব্যবহার করে সক্রিয় হয়ে উঠছে জঙ্গিরা। নতুন নতুন সদস্যও নিয়োগ করছে তারা।
সীমান্ত লাগোয়া বিভিন্ন মাদ্রাসায় জঙ্গি মদতের সামনে এসেছে অনেকদিন আগেই। তবে খোদ কলকাতার পার্ক স্ট্রিট চত্বরও যে এর আওতার বাইরে নেই, তার প্রমাণ ২০০১ সালের আমেরিকান সেন্টারে হামলা থেকে সাম্প্রতিক কালে বঙ্গবন্ধুর আততায়ীর গ্রেফতারি। শেখ মুজিবর রহমান হত্যায় যুক্ত ছিল আব্দুল মাজেদ। সে দেড় যুগেরও বেশি সময় লুকিয়ে ছিল পার্ক স্ট্রিট চত্বরে। বিয়েও করেছিল এখানে। ফলে সবমিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গকে যে জঙ্গিরা তাদের নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বেছে নিয়েছে, বারবার তা সামনে এসেছে।
Tags:
West Bengal
Terrorist
Bengali news
LET
jmb
AL Queda
is terrorist in kolkata
is terrorist in kolkata latest news
is terrorist in kolkata arrested
is terrorist in kolkata news
is terrorist in kolkata news update
is terrorist in kolkata latest news update
jmb terrorist in kolkata
west bengal terrorists
is terrorist
is terrorist news
jmb terrorists arrested in west bengal
is terrorist news update
is terrorist latest news
terrorist arrested in kolkata
terrorist in bengal
laskar e taiba
terror net in bengal
sleeper cell bengal