img

Follow us on

Tuesday, Apr 30, 2024

Hit Couple: ২০২২-এর হিট জুটি কারা?

২০২২-এর হিট জুটি কারা?

  2023-01-05 20:19:24

২০২২ সালে কোন জুটি হিট?বাংলার রাজনীতির বহু নাম উঠে এসেছে গত এক বছরে। একটার পর একটা কেলেঙ্কারিও ভেসে উঠেছে। আর সামনে এসেছে তাঁদের নাম। যারা সেরা। অনেক অপরিচিত মুখ উঠে এসেছে শিরোনামে। চলুন উঁকি দেওয়া যাক সেই নামী-অনামী চরিত্র ও জুটির দিকে। 

প্রথমেই সকলকে ১০ গোল দিয়েছেন পার্থ-অর্পিতা জুটি। রাজ্যের তৎকালীন মন্ত্রী যে এভাবে ডুবে ডুবে জল খাচ্ছিলেন,তা বোধহয় কল্পনাও করতে পারেননি অতি বড় তৃণমূল সমর্থকও। একটা গোয়েন্দা হানা প্রকাশ্যে এনে দিল সবকিছু। বেআব্রু পার্থ। বান্ধবী অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হল কোটি কোটি টাকা। প্রথমে টালিগঞ্জ। তারপর  বেলঘরিয়া। আপামর বাঙালি রসগোল্লার মতো চোখ করে দেখলেন,ঘরের হাড় পাঁজর থেকে কীভাবে বেরিয়ে আসছে পাঁজা-পাঁজা নোট। তা গুনতে আনা হচ্ছে মেশিন। গভীর রাত পর্যন্ত চলছে টাকা গোনার পালা। 
নতুন বছর পড়ে গেলেও এখনও দুজনেই জেলের ঘানি টানছেন। তবে দুজনকে নিয়ে তদন্তের পর আদালতে যে চার্জশিট জমা পড়েছে,তাও চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে সকলের। জানা গেছে,বান্ধবীকে নিয়ে গোয়া থেকে থাইল্যান্ড ভ্রমণ করেছেন পার্থ। বান্ধবীর নামে ৩১টি জীবন বিমার পলিসি। বছরে এর জন্য দিতে হতো দেড় কোটি টাকা। বান্ধবীকে কলকাতাতেই কিনে দিয়েছিলেন দুটি ফ্ল্যাট। একটি টালিগঞ্জে। অন্যটি বেলঘরিয়ায়। এছাড়াও মাঝে মাঝে ছুটি কাটাতে ছুটতেন শান্তিনিকেতনে। সেখানে নিরালায় থাকার জন্য বাড়িও বানিয়ে ফেলেছিলেন মন্ত্রীমশাই। নামটাও দিয়েছিলেন সুন্দর। অপা। মানে অর্পিতা মুখার্জি আর পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নামের আদ্যক্ষর। বাংলার অসাধারণ এক প্রেমকথা। রিয়েল রোমান্টিক জুটি। তবে এই রোমান্স কি হারিয়ে গেল দুর্নীতির অন্ধকারে? অযোগ্যদের শিক্ষা বিভাগে চাকরি পাইয়ে দিতে যেভাবে তাঁরা জাল বিস্তার করেছিলেন,টাকা তুলেছিলেন,সেই টাকাই ডুবিয়ে দিল ভেলা। সারা দেশ দেখল,কীভাবে শিক্ষাকে জলাঞ্জলি দিয়ে কেলেঙ্কারির রাজ্যে পরিণত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। 

এবার আসি আর এক জুটির কথায়। তাঁদের একজন শাসক দলের তালেবর নেতা। অনেকে তাঁকে বীরভূমের বাঘ বলে পরিচয় দেন। সেই অনুব্রত মণ্ডলও এখন জেলে। কয়লা থেকে গরু পাচার। কেলেঙ্কারির অভিযোগে তাঁর কপালে নাচছে তিহাড়। ইডির তলব সত্ত্বেও এক পুরনো মামলায় রাতারাতি তাঁকে গ্রেফতার করেছে রাজ্য পুলিশ। সেই মামলা ধোপে টেকেনি। জামিন হয়ে গেছে। এখন জেলবন্দি কেষ্ট। তবে তাঁর সঙ্গে জুটি বাঁধতে চলেছেন, তাঁর জেলারই আরেক মণ্ডল। তিনি টুলু । তাঁকেও জেরার জন্য দিল্লি নিয়ে যেতে তলব করেছে ইডি। তবে রাতারাতি তাকেও পুরনো এক মামলায় গ্রেফতার করে পুলিশ। রাজ্য পুলিশের কী অপার মহিমা। যেমন গুরু,তেমন চেলা। পুরনো মামলায় গ্রেফতার করে দিল্লি যাওয়া আটকালেও আপাতত জামিনে টুলু মণ্ডল। কিন্তু তার আর অনুব্রতর জুটি কীভাবে?এর জন্য পিছিয়ে যেতে হয় বেশ কয়েকটি বছর। 

রাজ্যে সদ্য় ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল কংগ্রেস। বীরভূমের দায়িত্বে অনুব্রত মণ্ডল। তখন সামান্য এক পাথর খাদানের ব্যবসায়ী টুলু ক্রমশ ফুলে ফেঁপে উঠতে শুরু করে। দুই মণ্ডলের মধ্যে যোগাযোগের ঘটক এক পুলিশ কর্তা। মহম্মদবাজারে পরপর চারটি পাথর খাদানের মালিক হন টুলু। এই অবৈধ খাদানের ব্যবসা থেকে কোটি কোটি টাকা তুলতে শুরু করে সে। এমনকি সরকারি রাজস্বও বেআইনি ভাবে এই টুলু মণ্ডল তুলত বলে অভিযোগ। সবকিছুই চলত অনুব্রতর অঙ্গুলি হেলনে। গোয়েন্দা সূত্রে খবর,গরু ও কয়লা পাচার থেকে যে কোটি কোটি টাকা ঘরে তুলতেন অনুব্রত,সেই টাকা খাটতো টুলুর অবৈধ খাদানেও। পুরো বিষয়টি তদন্ত করতেই অনুব্রতর দেহরক্ষী সায়গল হোসেনের সঙ্গে টুলুকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করতে চায় ইডি। যেমন তারা জেরা করতে চায় অনুব্রতকেও। কিন্তু মমতা পুলিশের সৌজন্যে দুজনেরই গত বছর আটকে গিয়েছে দিল্লি যাত্রা। কি হবে তেইশে? ২০২২ এর হিট লিস্টে নাম থাকছে এই জুড়িরও। 

এবার আসি দুই শিক্ষিকার কথায়। একজন প্রাক্তন,অন্যজন বর্তমান। একজন আটকে দিয়েছিল অন্যজনের চাকরি। আদালতের নির্দেশে বদলেছে ভাগ্য। এদের একজন অঙ্কিতা অধিকারী। প্রাক্তন মন্ত্রী পরেশ অধিকারীর কন্যা। অন্যজন ববিতা সরকার। মন্ত্রীমশাইয়ের বদান্যতায় চাকরির তালিকায় ববিতার নীচে নাম থাকলেও সেখানে ক্ষমতার কারসাজি ও  শিক্ষা বিভাগের বদান্য়তায় শিক্ষিকার চাকরি পেয়েছিলেন মন্ত্রী কন্যা অঙ্কিতা।  সিদ্ধান্ত চ্য়ালেঞ্জ করে আদালতে যান ববিতা। জয়ী হন ববিতা। ক্ষতিপূরণ সমেত শিক্ষিকার চাকরি পান তিনি। চাকরি যায় অঙ্কিতার। এমন নজির বাংলা আগে দেখেনি। তাই কেলেঙ্কারির বাংলায় এই জুটিও হিট লিস্টে নাম তুলে নেবেন। 

শিক্ষা কেলেঙ্কারিতে নাম উঠে এসেছে আর এক জুটির। জোড়া ভট্টাচার্য। একজন মানিক,অন্যজন সুবীরেশ। প্রথম জন ছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের দায়িত্বে। অন্যজন এসএসসির চেয়ারম্যান পদে। অর্থাৎ,প্রাথমিক থেকে নবম,দশমে নিয়োগ কেলেঙ্কারির সময়ে এই দুজনই ছিলেন,দুই বিভাগের শীর্ষে। তাঁদের সঙ্গে পার্থর ফোনাফুনিও হাতে আছে গোয়েন্দাদের। ২০১২ থেকে ২০২২,দশ বছর প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের দায়িত্বে ছিলেন মানিক ভট্টাচার্য। পর্ষদ সভাপতির পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়কও হন তিনি। কলেজ ভর্তির নামে টাকা নেওয়া থেকে শুরু করে বেসরকারি কলেজগুলিকে অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রেও তিনি টাকা তুলতেন বলে অভিযোগ। সুপ্রিম কোর্ট সিবিআই তদন্তে রক্ষাকবচ দেওয়ার পর ইডি গ্রেফতার করেছে মানিককে। নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে আপাতত তিনি জেলে। একইভাবে প্রেসিডেন্সি জেলে রয়েছেন সুবীরেশ ভট্টাচার্য। ২০১৪ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত তিনি এসএসসির চেয়ারম্যান। দুর্নীতির দায়ে তাঁকে যখন গ্রেফতার করা হচ্ছে,তখন তিনি উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। অভিযোগ,তাঁর আমলে এখনও পর্যন্ত, ৩৮১টি ভুয়ো নিয়োগের হদিশ মিলেছে। যার মধ্যে ২২২ জন পরীক্ষাই দেননি। অর্থাৎ পরীক্ষায় না বসেও পাশ! চাকরি পাইয়ে দিয়েছিলেন তিনি। কার নির্দেশে? তা তদন্ত করে জানতে চাইছে আদালত। মানিক আর সুবীরেশ দুজনকেই মুখ খুলতে বলেছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। কিন্তু এখনও তাঁরা মুখ না খোলায়,ভিন রাজ্যে নিয়ে গিয়ে তাঁদের জেরা করার বিষয়টিকে খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে সিবিআইকে। 

কেলেঙ্কারির সূত্রেই বাংলায় উঠে এসেছে আর এক জুটির কথা। তাঁরা মেনকা গম্ভীর ও রুজিরা নারুলা। সম্পর্কে দুজনে বোন। রুজিরা নারুলা তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী। কয়লা কেলেঙ্কারি মামলায় রুজিরাকে জেরা করেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। ২০১৯ সালের মার্চের গভীর রাতে কলকাতা বিমানবন্দরে মেনকা ও রুজিরাকে প্রথমবার আটক করে শুল্ক বিভাগ। অভিযোগ ওঠে সোনা পাচারের। তাঁদের কাছ থেকে নাকি মিলেছিল ২ কেজি সোনা। পরে গ্রিন করিডর দিয়ে ভিআইপি হিসেবে বের করে দেওয়া হয় দুজনকেই । কিন্তু এর পর থেকেই তাঁদের পিছু নিয়েছে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ। ২০২০ সালের শেষ দিকে সিবিআই যখন বেআইনি কয়লা পাচার নিয়ে মামলা দায়ের করে,তখন নাম উঠে আসে অনুপ মাঝি ওরফে লালার। গোয়েন্দাদের দাবি,লালার সঙ্গে যোগসাজস আছে রুজিরা ও অভিষেকের। বেআইনি কয়লা পাচারের টাকা রুজিরার থাইল্যান্ডের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেও জমা হয় বলে অভিযোগ। তা নিয়ে কয়েক দফায় জেরাও করা হয়েছে রুজিরাকে। গোয়েন্দাদের তদন্তের আওতায় রয়েছেন তাঁর বোন মেনকা গম্ভীরও। মায়ের অসুস্থতার কথা বলে তিনি ভারত ছাড়তে চেয়েছেন। কিন্তু তাঁর আর্জি নাকচ করে দিয়েছে আদালত। ফলে সোনা পাচার থেকে কয়লা কেলেঙ্কারিতে যেভাবে নাম জড়িয়েছে রুজিরা নারুলা ও মেনকা গম্ভীরের,তাতে এমন বোনের জুটিও যে ২০২২ সালে হিট, তা বলাই বাহুল্য।   

সবশেষে যে জুটির নাম বাংলায় মুখে মুখে,তা হল পিসি-ভাইপো। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গত বছরের শুরু থেকেই তাঁদের নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। এমনও রটে যায় যে পিসিকে সরিয়ে দলের মাথায় বসতে চান ভাইপো। একসময় রেগেমেগে তৃণমূলের কমিটিই ভেঙে দিয়েছিলেন মমতা। পরে অবশ্য নতুন করে কমিটি গড়েন তিনি। সেখানে অভিষেক হন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। এখন তিনিই দলের সর্বেসর্বা হতে চাইছেন। জেলায় গিয়ে কাউকে কিছু না জানিয়েই তাঁর কাছে ইস্তফা দিতে বলছেন পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধানদের। ফলে শুরু হয়ে গেছে গোপন টাগ-অফ-ওয়ার। তবে রাজ্য জুড়ে একের পর এক কেলেঙ্কারি যেভাবে সামনে এসেছে,তাতেই জুটিতে আতঙ্কে আছেন দুজনে। আতঙ্ক কয়েক গুণ বেড়ে গেছে আদালতের মন্তব্যে। বিচারপতি যখন বলছেন,ধেড়ে ইঁদুর ধরা পড়বে,তখন কোন দিকে সেই আঙুল,তা বুঝতে বাকি থাকে না বঙ্গবাসীর। তাই ঘরোয়া বিবাদের অভিযোগের মধ্যেই চলছে নিজেদের রক্ষা করার চেষ্টা। এখন পরিণতি কী হয় কোন জুটির, সেটাই দেখবে ২০২৩। 


 

 

Tags:

 

Mamata Banerjee

CM Mamata

anubrata mondal

Mamata

Abhisek Banerjee

Ankita Adhikary

Teacher Recruitment scam

cow smuggling scam

ssc scam

scam

Babita Sarkar

Manik Bhattacharya

coal scam

abhisek

Arpita Mukherjee

Bengal scam

mamta banerjee

Apa

Partha Arpita

subiresh bhattacharya

cattle scam

kesto

Tulu Mondal

money recovered

tmc abhisek

partha chatterjeee

anubtata tulu

kesto tulu

ankita babita

babita sirkar

manik subiresh

ruchira menoka

menoka ruchira

menoka gambhir

ruchira narula

abhisek wife

bengal scam 2022

west bengal scam


আরও খবর


খবরের মুভি


ছবিতে খবর