ধর্নায় বসে ক্ষমতায়, ধর্নায় বসেই বিদায়?
গান হচ্ছে এখন, গান ছিল তখন
সিঙ্গুর থেকে রেড রোড। দুই ধরনার সময়কালের ফারাক ১৭ বছর। তখনও ধরনা মঞ্চে গান হতো। এখনও গান হচ্ছে। গলা মেলাচ্ছেন মমতা। তবে সেদিনের মমতা আর এদিনের মমতায় বিস্তর ফারাক। সেদিন তিনি বিরোধী নেত্রী। টানা বাম জমানার অবসানের জন্য লড়াই চালাচ্ছেন। তাই কৃষকদের জমি নিয়ে টাটাদের কারখানা বন্ধের জন্য জাতীয় সড়ক অবরোধ করেই নেমে পড়েছিলেন ধর্নায়। টানা ২৬ দিন চলেছিল সেই ধর্না আর অনশন। সেদিনের আন্দোলনের ওপর ভিত্তি করে রাজ্যে বদল এনেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। সেদিন টাটাদের কারখানা বন্ধ হয়ে গেলেও মানুষ ভেবেছিল, রাজ্যে বদল আসবে। বাংলা ঘুরে দাঁড়াবে। সেদিনের মমতা, মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন ২০১১ সালে। আজ ২০২৩। মাঝে চলে গেছে ১২টি বছর। আর এই সময়ের মধ্যে বাংলার কথা এলেই লোকের মুখে মুখে ফেরে দুর্নীতির কথা। দুর্নীতির সিরিজ বয়ে গেছে গত কয়েক বছরে। কোনও লুকোচাপা নয়, গোয়েন্দা তদন্তে যেভাবে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির কারবার ফাঁস হয়েছে, তাতে চোখ ছানাবড়া হয়ে গেছে রাজ্যবাসীর। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বান্ধবীর দুই ফ্ল্যাট থেকে মিলেছে ৫০ কোটি টাকারও বেশি। মিলেছে সোনা, গয়নার ভাণ্ডার। এরপর শিক্ষা কেলেঙ্কারি যেন রাজ্যটাকে আরও টেনে নীচে নামিয়েছে। প্রাইমারি থেকে নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ। সর্বক্ষেত্রে টাকা দিয়ে বিক্রি হয়েছে চাকরি। পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে নিতান্তই চোখে ধুলো দিতে। যোগ্যদের বঞ্চিত করা হয়েছে। আর যারা সাদা খাতা জমা দিয়েছে, তারা পেয়ে গেছে চাকরি। সেই চাকরি কীভাবে বিক্রি হয়েছে, তাও সামনে এসেছে। এরমধ্যেই শিক্ষা বিভাগের হোমড়া চোমড়ারা জেলে গেছে। জেলে গেছে মধ্যস্থতাকারীরা। এরা সকলেই শাসক দলের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পাশাপাশি সামনে এসেছে কয়লা পাচার ও গরু পাচার কেলেঙ্কারি। এই কেলেঙ্কারির জেরে তিহার জেলে বন্দি হয়ে আছেন বীরভূম তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। চারদিকে চোর চোর ধ্বনি উঠছে। মন্ত্রী থেকে নেতা, সকলেই মুখ ঢাকতে ব্যস্ত। এই সময়ই গদি হারানোর ভয়ে ফের ধর্নার প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলছেন, সরকার হিসেবে নয়, দল হিসেবে তাঁর এই ধরনা কর্মসূচি।
মমতার অভিযোগ, রাজ্যকে বঞ্চনা করা হচ্ছে। টাকা দেওয়া হচ্ছে না। তাই ধরনা। কিন্তু কান পাতলেই অন্য কথা শোনা যাচ্ছে। সবাই বলছেন, দুর্নীতির খবর অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতেই আসরে মমতা। যেমন ঠিক চার বছর আগে ধরনায় বসেছিলেন তিনি। তখন কলকাতার পুলিশ কমিশনার আইপিএস রাজীব কুমার। চিটফান্ড কাণ্ডে তাঁর নাম জড়িয়ে যাওয়ায় হানা দিয়েছিল সিবিআই। কিন্তু সেই তদন্ত আটকাতে ধরনায় বসে পড়েন মমতা। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, রাজীবকে ধরলে কেলেঙ্কারির হোতাদের নাম ফাঁস করে দিতে পারেন পুলিশ কমিশনার। তা ধামা চাপা দিতেই সেই নাটক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
এবারও সেই অভিযোগ উঠছে। একের পর এক দুর্নীতির ফাঁস ক্রমশ চেপে বসায় ফের ধরনার আশ্রয় নিয়েছেন মমতা। তবে সিঙ্গুরের সময় তিনি এমন ভাবে তোতলাতেন না। এখন কেন্দ্রকে আক্রমণ করতে গিয়ে যা স্পষ্ট হচ্ছে।
ধরনা মঞ্চে গান হচ্ছে, হাসি ঠাট্টা হচ্ছে, প্রশাসনিক কাজকে সরিয়ে রেখে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে স্লোগান উঠছে। কিন্তু মরছে রাজ্যের মানুষ। মাসের পর মাস আন্দোলন করেও ন্যায্য চাকরির আশায় দিন গুণছেন চাকরিপ্রার্থীরা। শিক্ষকের অভাবে কেঁদে উঠছে শূন্য স্কুলগুলির ক্লাসরুম। মমতার এই গান সেখানে পৌঁছচ্ছে না। বরং ভাঙা হাটের বাঁশের ম্যারাপে যে শূন্যতার ধ্বনি সৃষ্টি হয়, সেই শূন্যতাই হাহাকার করে ফিরছে বাংলার আকাশে বাতাসে। রেড রোডের ধর্নায় যেন আরো স্পষ্ট করে দিচ্ছে, বিদায় আসন্ন। সিঙ্গুরের ধরনা যেমন ক্ষমতার রাস্তা প্রশস্ত করেছিল, তেমনি রেড রোডের ধরনা দেখিয়ে দিচ্ছে বিদায়ের রাস্তা।
মাধ্য়ম ব্যুরো রিপোর্ট
Mamata Banerjee sits overnight in 'dharna' raises political temperature, singur shows the path of entrance in power, Red Road exit way?
Tags:
Mamata Banerjee
mamata banerjee speech
mamata banerjee news
mamata banerjee news today
mamata banerjee today
dharna
mamata banerjee dharna
mamata banerjee dharna news
mamata banerjee dharna today
mamata banerjee against central
mamata banerjee dharna news today
mamata banerjee singur dharna
mamata banerjee red road dharna
mamata dharna politics