img

Follow us on

Wednesday, Oct 23, 2024

Howrah: হাওড়া শিল্পাঞ্চল আজ শ্মশানভূমি! বিশ্বকর্মা পুজোর আনন্দ ম্লান

দুর্গাপুজোকে টেক্কা দিত বিশ্বকর্মা! এখন হাওড়ায় পুজো হয় নম নম করে

img

হাওড়ার কারখানায় শ্রমিকরা (নিজস্ব চিত্র)

  2023-09-17 12:01:30

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: শিল্পের জন্য যে শহরের পরিচিতি ছড়িয়ে পড়েছিল দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও সেই শহরে শিল্প আজ শ্মশান ভূমিতে পরিণত হয়েছে। প্রাচ্যের শেফিল্ডস নামে পরিচিত হাওড়া (Howrah) শিল্পাঞ্চলের বিশ্বকর্মা পুজোর জাঁকজমক জৌলুস একটা সময় হার মানাত দুর্গাপুজোকেও। আজ সেই ছবি ধূসর। এখন শুধুই ইতিহাস। বড় বড় বিশ্বকর্মার মূর্তি, তাসা, ব্যান্ড পার্টি, ঢাকের বাদ্যিতে যেখানে কানের পর্দা ফাটার উপক্রম হত আজ সেখানেই যেন নীরবে কোনওরকমে নিয়ম রক্ষার ঘট পুজোয় শিল্পের দেবতার নামমাত্র আরাধনায় মাততে হচ্ছে হাওড়া শিল্পাঞ্চলের মানুষদের।

এক সময় হাওড়ায় কেমন হত বিশ্বকর্মা পুজো?

আলামোহন দাসের তৈরি হাওড়ার দাসনগর শিল্পাঞ্চল এখন শ্মশানে পরিণত হয়েছে। গেস্টকিন উইলিয়ামস, রেমিংটন রেন্ড, বার্ন স্ট্যান্ডার্ড, ইন্ডিয়ান মেশিনারি, হুগলি ডক অ্যান্ড পোর্ট ইঞ্জিনিয়ারিং একের পর এক গঙ্গার ধার বরাবর গড়ে ওঠা জুট মিল, ফ্লাওয়ার মিল এখন এক একটা বিরাট ভূতুড়ে বাড়ির মত দাঁড়িয়ে আছে হাওড়া (Howrah) শহরজুড়ে। কোনও রকমে টিকে রয়েছে ঢালাই ও যৎসামান্য কয়েকটি লৌহ ইস্পাত, ক্ষুদ্র শিল্প। একটা সময় কারখানার ছুটি হলে বেজে উঠত সাইরেন। আর হাজারে হাজারে লোক কারখানা থেকে বেরিয়ে রওনা দিতেন গন্তব্যে। আজ সেই সাইরেনও শোনা যায় না। তখন দুর্গাপুজো মহালয়ার মতই বিশ্বকর্মা পুজো আসার ৩-৪ দিন আগে থেকেই একটা পুজো পুজো ভাব ফুটে উঠতো হাওড়া শিল্পাঞ্চলজুড়ে। কোনও কোনও কারখানায় তো বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষে এক সপ্তাহ ছুটি দিয়ে দেওয়া হতো। দুর্গাপুজোর মতোই তখন বিশ্বকর্মা পুজোতে চালু ছিল থিম প্যান্ডেল। কোনও কারখানা কত বড় বিশ্বকর্মা প্রতিমা নিয়ে আসবে বা কে কাকে মণ্ডপে টেক্কা দেবে এটাই ছিল সব থেকে বড় প্রতিযোগিতা। বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষে শ্রমিকদের সপরিবারেরও নিমন্ত্রণ থাকত। ভোর থেকেই শ্রমিক পরিবারের বউ ও মেয়েরা চলে আসতো কারখানায় পুজোর জোগাড় করতে। তারপর হত বিশ্বকর্মা পুজো এবং দিনভর খাওয়া-দাওয়া, হই হুল্লোর আনন্দ উৎসব। সারা বছরের কাজের ক্লান্তি চাপা পড়ে যেত এই দু-তিন দিনে।

বিশ্বকর্মা পুজো নিয়ে কী বললেন লেদ কারখানার মালিক, শ্রমিকরা?

লেদ কারখানার কর্মী সৌমিক মণ্ডল বলেন, তখনকার দিনে অনেক আগে থেকেই পুজো নিয়ে নানা পরিকল্পনা করা হত। কে ঠাকুর আনতে যাবে, এবারে কোনও শিল্পীকে আনা হবে সেসব নিয়ে আলোচনা চলত। সব কিছুর মধ্যেই একটা অন্যরকম অনুভূতি ছিল। এখন সবটাই ইতিহাস। কোনওরকমে সেই ট্রাডিশনকে ধরে রাখতে কোথাও ছোট ঠাকুর এনে আবার কোথাও শুধু ঘটপুজোয় বিশ্বকর্মার আরাধনা করতে হয়। জগদীশপুরের বাসিন্দা রবীন চট্টোপাধ্যায় বলেন, চাকরি করতেন বান স্ট্যান্ডার্ড কারখানায়। কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সম্পূর্ণ অসহায় হয়ে পড়েছিলাম। কোনও চাকরি না পেয়ে সংসারে অভাব নেমে আসে। মেয়ের পড়াশুনা বন্ধ হয়ে গেল। সেই কষ্টের দিনগুলো এখনও মনে পড়লে খুবই খারাপ লাগে। বিশ্বকর্মা পুজো একটা উৎসবের আকার নিত। এখন সবটাই ইতিহাস। কারখানা মালিক সনৎ কুমার দাস বলেন, হাওড়া (Howrah) শিল্পাঞ্চলে একসময় ছিল শিল্পের স্বর্ণযুগ। আজ সেই গৌরব আর নেই।

মৃৎশিল্পীদের কী বক্তব্য?

এক মৃৎশিল্পী বাপ্পা পাত্র বলেন, একটা সময় বিরাট বিরাট ঠাকুর হত। শয়ে শয়ে ঠাকুর বিক্রি হতো পুজোর দুদিন আগে থেকেই। এখন বড় ঠাকুরের অর্ডার তো আসেই না। উল্টে ছোট ঠাকুরের দাম পাওয়া যায়না। প্রতিবছরই ঠাকুরের চাহিদা কমছে। তিনি গত বছর যেখানে ৪৫ টি ছোট ঠাকুর তৈরি করেছিলেন এবছর ২০টি ঠাকুর তৈরি করেছেন। তাও বিক্রি হচ্ছেনা। হাওড়ায় (Howrah) ফিরে আসুক শিল্পের সেই সোনালী অতীত। শিল্পের কারিগরের কাছে সেই প্রার্থনা করলেন হাওড়ার শ্রমিকরা।

 

দেশের খবরদশের খবরসব খবরসবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের FacebookTwitter এবং Google News পেজ।

Tags:

Madhyom

bangla news

Bengali news

Howrah

biswakarma


আরও খবর


ছবিতে খবর