img

Follow us on

Saturday, May 18, 2024

Jom Pukur Brata: কার্তিক মাসে গ্রাম বাংলায় পালিত হয় 'যমপুকুর ব্রত'! জানেন এর নেপথ্য গল্প? 

চার বছর এই ব্রত করতে হয়। চতুর্থ বছরে ব্রাহ্মণ ভোজন করানোর নিয়ম চালু রয়েছে।

img

যমপুকুর ব্রত।

  2022-10-29 13:37:00

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক:  গ্রাম বাংলায় অবিবাহিত  হিন্দু মহিলারা 'যমপুকুর ব্রত' উদযাপন করে থাকেন। সম্পূর্ণ কার্তিক মাস ব্যাপী এই ব্রত পালন করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী ,চার বছর এই ব্রত পালন করতে হয়। এই ব্রতের উদ্দেশ্য হলো- পরলোক গমন করেছে এমন প্রতিবেশী-আত্মীয়স্বজনরা যেন উদ্ধার পায় , শান্তি পায় এবং নরক যন্ত্রণা ভোগ না করে‌ ।

বসতবাড়ির উঠোনে বা মেঝেতে আল দিয়ে অথবা পুকুর পাড়ে এই ব্রত করা হয়। প্রাচীন কালে এক ব্রাহ্মণী ছিলেন। তাঁর একটি পুত্র এবং একটি কন্যা সন্তান ছিল। কন্যার সাথে বিয়ে হয় যমরাজের। কন্যার বিবাহের পর ব্রাহ্মণীর খুব মন খারাপ হয়ে যায়। বাড়িতে তিনি কন্যার অভাব পূরণ করতে ছেলের বিয়ে দেন। ছেলের বৌ নিজ গুণে সবার মন জয় করে। কার্তিক মাস শুরু হতেই উঠোনে খুঁড়ে সে যমপুকুর ব্রত আরম্ভ করে, তা দেখে তাঁর শ্বাশুড়ির মনে হয় ছেলের বৌ তাঁকে তুকতাক করছে। উঠোনের যমপুকুর শ্বাশুড়ি বুজিয়ে দেয়। ছেলের বৌ যমকে উদ্দেশ্যে করে কাঁদতে কাঁদতে বলে -'আমি তোমার উদ্দেশ্যে যমপুকুর ব্রত করলাম। আমার একবছর হলো'। এরপরের চারবছরে একই ভাবে শ্বাশুড়ির চোখের আড়ালে এই ব্রত সম্পন্ন করতে চায় তার ছেলের বৌ। কিন্তু প্রতিবারই ধরা পড়ে যায়। প্রতিবারই তার শ্বাশুড়ি যমপুকুর মাটি ফেলে বন্ধ করে দেয় এবং তাঁর ছেলের বৌ যমের উদ্দেশ্যে যমপুকুর ব্রত সম্পন্ন হওয়ার কথা বলে। এই ভাবে চারবছর ধরে ছেলের বৌ 'যমপুকুর ব্রত' সম্পন্ন করে‌। এরপর অসুস্থতার কারণে তাঁর শ্বাশুড়ি মারা যায়। শ্রাদ্ধ শান্তির জন্য যমরাজের স্ত্রী অর্থাৎ ব্রাহ্মণীর মেয়ে তখন বাপের বাড়ি যায় এবং কাজকর্ম সেরে পুনরায় যমরাজের কাছে ফিরে আসে। যমরাজ তখন তাঁর স্ত্রী কে বলে কখনও যমলোকের দক্ষিণ দিকে যাবে না। কৌতূহলী মনে যমরাজের স্ত্রী ভাবলো কি আছে দক্ষিণ দিকে ? দেখতেই হবে। দক্ষিণ দিকে যেতেই দেখলো তাঁর নিজের মা তখন নরক যন্ত্রণা ভোগ করছেন। যমরাজের স্ত্রী তখন ছুটে যমরাজের কাছে গিয়ে তাঁর নিজের মায়ের উদ্ধারের কথা বলে। যমরাজ তখন বলে, 'যে ছেলের বৌকে তোমার মা এতো কষ্ট দিয়েছে , সে যদি তোমার মায়ের উদ্দেশ্যে যমপুকুর ব্রত উদযাপন করে তবেই তোমার মা উদ্ধার পাবেন'। কিন্তু সে কি রাজি হবে? যম একথা বলার পরেই তাঁর স্ত্রী ছুটে গেল বাপের বাড়ি। তখন দেখলো তার ভাইয়ের বৌ প্রসব যন্ত্রণা ভোগ করছে। কিন্তু প্রসব হচ্ছে না‌। যমের স্ত্রী তাঁকে বললো -" শ্বাশুড়ির উদ্দেশ্যে যমপুকুর ব্রত উদযাপন করলেই সন্তান ভূমিষ্ঠ হবে" । তখন তার ভাইয়ের বৌ যমপুকুর ব্রত সম্পন্ন করলো । তার গর্ভের সন্তান ভূমিষ্ঠ হলো এবং শ্বাশুড়ি উদ্ধার পেল।

প্রথমেই ধান, মানকচু, কলা, হলুদ, কলমী, শুশনি, ও হিঞ্চের চারাগাছ, সুপুরি, কয়েকটি কড়ি এবং কয়েকটি মাটির মূর্তি সংগ্রহ করতে হয়।

আরও পড়ুন: জনশ্রুতি, তাঁর নামেই হয়েছে রানাঘাট শহরের নামকরণ, জানুন রণ ডাকাতের কালীপুজোর গল্প

এরপর চারটি ঘাটসহ চৌকো একটি পুকুর ( একহাত ×একহাত ক্ষেত্রফলের) কাটতে হয়। এটি জলপূর্ণ করে দক্ষিণদিকের ঘাটে আলপনার উপর মাটির যমরাজ, যমরাণী ও যমের পিসির মূর্তি স্থাপন করতে হয়। উত্তরদিকের ঘাটে মেছো ও মেছুনী, পূর্বদিকস্থ ঘাটে ধোপা ও ধোপানী, পশ্চিমদিকের ঘাটে মাটির কাক, বক, চিল, কুমির, কচ্ছপ, হাঙর ইত্যাদির মাটির মূর্তি রাখতে হয়। পুকুরের মাঝখানে একগোছা ধান, কলমী, শুশনি ও হিঞ্চে গাছ পুঁততে হয়; কচু, হলুদ প্রভৃতি গাছ পাড়ে থাকে। পুজোর সময় পুকুরের চারকোণে চার কড়া কড়ি, চারটি হলুদ ও সুপারি পুঁতে দিয়ে একটি প্রদীপ জ্বালতে হয়; তারপর পূর্বদিকে মুখ করে বসে ফুল সহযোগে যমের পুজা করতে হয়। পুকুরে জল দেওয়ার, গাছে জল ঢালার এবং মূর্তিগুলি পূজা করার আলাদা আলাদা মন্ত্র আছে। 

পুজো শেষ করে বলতে হয়-
"সাত ভাইয়ের বোন আমি ভাগ্যবতী।
যমপুকুর পূজি আমি, সাক্ষী জগৎপতি।।" চার বছর এই ব্রত করতে হয়। চতুর্থ বছরে ব্রাহ্মণ ভোজন করানোর নিয়ম চালু রয়েছে। গ্রাম বাংলায় এই ব্রত আজও পালিত হয়।

Tags:

Jom Pukur Brata

Significance of jom pukur brata

what is Jompukur brata


আরও খবর


খবরের মুভি