img

Follow us on

Tuesday, Dec 10, 2024

Nalanda University: অক্সফোর্ড প্রতিষ্ঠার পাঁচশো বছরেরও আগে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতি ছিল বিশ্বজুড়ে

৯০ লাখ বই ছিল নালন্দার গ্রন্থাগারে, লাইব্রেরি পুড়িয়ে দেয় বখতিয়ার খিলজির বাহিনী

img

প্রাচীন নালন্দা (ফাইল ছবি)

  2024-05-10 21:03:12

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ৫০০ বছরেরও বেশি আগে ভারতের নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের (Nalanda University) খ্যাতি পৃথিবী জুড়ে ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির তিনটি ভবন ছিল। তার মধ্যে একটি ছিল ন'তলার। ইতিহাসবিদদের মতে, সেখানে সংগ্রহে ছিল ৯০ লাখ বই। সারা পৃথিবী থেকে দশ হাজারেরও বেশি পড়ুয়া আবাসিক ছাত্র হিসেবে পাঠ নিতেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাবেই গড়ে ওঠে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়। আশপাশের শহর বলতে বিখ্যাত বৌদ্ধ ধর্মের কেন্দ্র বোধগয়া। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাল ইটের ধ্বংসাবশেষ আজও যেন কথা বলে।

৪২৭ খ্রিস্টাব্দ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল

ইতিহাসবিদদের মতে, ৪২৭ খ্রিস্টাব্দ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় (Nalanda University) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটা ছিল পৃথিবীর প্রথম আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় অর্থাৎ বর্তমান দিনে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ধরনের হস্টেলে আমরা দেখতে পাই যেখানে দূর-দূরান্ত থেকে পড়ুয়ারা পাঠ নিতে আসেন, আজ থেকে ১,৬০০ বছর আগে তা প্রথম করে দেখিয়েছিল নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হত চিকিৎসাবিদ্যা, যুক্তিবিদ্যা, গণিত, সর্বোপরি বৌদ্ধ নীতি। জানা যায়, পূর্ব এবং মধ্য এশিয়া থেকে সব থেকে বেশি ছাত্ররা এখানে আসতেন। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে দলাই লামা একবার বলেছিলেন, ''আমাদের সমস্ত জ্ঞানের উৎস নালন্দা থেকে এসেছে।'' ৭০০ বছর ধরে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ক্রমশ বিকশিত হয়েছিল। পৃথিবীতে এমন বিশ্ববিদ্যালয় আর একটিও ছিল না। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক পরে প্রায় পাঁচ শতক পরে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা জানতে পারা যায়। শিক্ষার পীঠস্থান হিসেবে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় যে সারা পৃথিবীকে পথ দেখাত- এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে (Nalanda University) বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব দেখা যায়। গুপ্ত সাম্রাজ্যের রাজারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিকাশে অনেক অবদান রেখেছিলেন বলে জানা যায়। তাঁরা বৌদ্ধ ধর্মের দর্শনকে প্রচার করতেন। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়ুর্বেদ শিক্ষার ওপরে জোর দেওয়া হত। আয়ুর্বেদিক শিক্ষাতে ওষুধের বদলে প্রকৃতিভিত্তিক নিরাময় পদ্ধতির প্রয়োগ করা হয়। সেখানে এই পাঠ ছাত্রদের দেওয়া হতো। ছাত্ররা তা শিখে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তার প্রয়োগ করতেন। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল প্রার্থনা হল, বক্তৃতা কক্ষ, পাশাপাশি ছিল হ্রদ এবং পার্ক।

ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইডের মর্যাদা পেয়েছে 

জানা যায়, বৌদ্ধশিক্ষা এবং দর্শন প্রচারের জন্য নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় (Nalanda University) থেকে নিয়মিতভাবে চিন, কোরিয়া, জাপান, ইন্দোনেশিয়া এবং শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলি থেকে পন্ডিত এবং অধ্যাপকরা আসতেন। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে পন্ডিত এবং অধ্যাপকরা আবাসিকভাবে এসে গবেষণা করতেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভারতের সাংস্কৃতিক এমন ভাব বিনিময়ের কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছিল নালন্দা। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষ বর্তমানে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইডের মর্যাদা পেয়েছে।

মুসলমান আক্রমণকারী বক্তিয়ার খিলজি 

১১৯০ সালের পর মুসলমান আক্রমণকারী বক্তিয়ার খিলজি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ধ্বংসলীলা চালায় এবং নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরিতে পুড়িয়ে দেয় বলে জানা যায়। জানা যায়, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ইখতিয়ারউদ্দিন বখতিয়ার খিলজির বাহিনী আগুন জ্বালালে তা তিন মাস ধরে জ্বলেছিল। এতটাই বিস্তৃত ছিল নালন্দার প্রাঙ্গণ। ঐতিহাসিকদের মতে, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের (Nalanda University) একটি শ্রেণিকক্ষে বসতে পারতেন ৩০০ জন ছাত্র। বর্তমান দিনের মতোই টিচারদের জন্য পোডিয়াম রাখা থাকত। জানা যায়, বিশ্বের যেকোনো দেশ থেকে আগত পড়ুয়াদের জন্য আবাসনগুলিও আলাদা আলাদা হত।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া কিন্তু অত সহজ ছিল না 

প্রাচীন নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া কিন্তু অত সহজ ছিল না। যথেষ্ট কঠিন প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে পড়ুয়ারা পেতেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার সুযোগ। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা পড়ুয়াদের মৌখিক পরীক্ষা নিতেন বলে জানা যায়। মৌখিক পরীক্ষা যাঁরা নিতেন সেই অধ্যাপকদের জন্য তৈরি করা হত একটি টিম। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে উল্লেখযোগ্য অধ্যাপক হিসেবে নাম উঠে আসে ধর্মপাল এবং শীলভদ্রের!

তালপাতার পান্ডুলিপি নিয়ে পালিয়ে বাঁচতে পেরেছিলেন কয়েকজন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী 

প্রথমেই বলা হয়েছে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় (Nalanda University) গ্রন্থাগারের ছিল ৯০ লাখ বই। এগুলো সবটাই হাতে লেখা। এগুলি ছিল তালপাতার পান্ডুলিপি। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে তিনটি লাইব্রেরি ভবনের মধ্যে একটি লাইব্রেরী ছিল নয় তলা বিল্ডিং। এটিকে 'মেঘের মধ্যে উড্ডয়ন' লাইব্রেরী বলে বর্ণনা করেছেন তিব্বতীয় বুদ্ধ পন্ডিত তারানাথ। ইখতিয়ার উদ্দিন বখতিয়ার খিলজি যখন নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের আগুন লাগিয়েছিল তখন অনেকে বই পুড়ে গেলেও বেশ কতগুলি তালপাতার পান্ডুলিপি নিয়ে পালিয়ে বাঁচতে পেরেছিলেন কয়েকজন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী। যেগুলি বর্তমানে রাখা আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেন্সে কাউন্টিং মিউজিয়াম অফ আর্ট এবং তিব্বতের ইয়ারলিং মিউজিয়ামে।

পরিব্রাজক হিউয়েন সাং নালন্দায় অধ্যাপনা করতেন

জানা যায় চিনা বৌদ্ধ সন্ন্যাসী এবং পরিব্রাজক হিউয়েন সাং নালন্দায় অধ্যাপনা করতেন। ৬৪৫ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ তিনি চিনে ফিরে যান। তখন তিনি ৬৫৭টি বৌদ্ধ ধর্ম গ্রন্থ সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে জানা যায়। এগুলি তিনি নিয়ে গিয়েছিলেন চিনা ভাষায় অনুবাদ করবেন বলে। হিউয়েন সাংয়ের জাপানি শিষ্য ছিলেন দোসো, তিনিও পরবর্তীকালে তার গুরুর পথ ধরে ওই বইগুলিকে জাপানি ভাষায় অনুবাদ করার সিদ্ধান্ত নেয়।

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের হামলার কারণ ছিল সম্পূর্ণভাবে ধর্মীয়

ঐতিহাসিকদের মতে, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের হামলার কারণ ছিল সম্পূর্ণভাবে ধর্মীয়। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় বৌদ্ধ ধর্মের পীঠস্থান হয়ে উঠেছে এবং তা ইসলামের পক্ষে বিপজ্জনক এই ধারণা থেকেই বখতিয়ার খিলজির বাহিনী গোটা নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের (Nalanda University) গ্রন্থাগারকে জ্বালিয়ে দেয়। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় খননের সময় বুদ্ধের ব্রোঞ্জের মূর্তি, হাতির দাঁত, হাড়ের টুকরো প্রভৃতি উদ্ধার হয়েছিল। কোনও কোনও মহলের বক্তব্য হল, হুণ রাজাদের আমলে মিহিরকুল প্রথম নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালিয়েছিলেন। পঞ্চম শতাব্দীতে আবার বাংলার গৌড় রাজারাও নাকি আক্রমণ শানিয়েছিলেন। তবে এই তথ্যের কোনও প্রমাণ সে অর্থে পাওয়া যায় না।

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

Tags:

Madhyom

bangla news

bengali news 

Nalanda University

archaeological remains Nalanda

Unesco World Heritage site

Turko-Afghan military general Bakhtiyar Khilji

oxford


আরও খবর


খবরের মুভি


ছবিতে খবর