Kathamrita: “সকলেই একদৃষ্টি হইয়া ঠাকুরের সেই অদ্ভুত অবস্থা নিরীক্ষণ করিতেছেন”......কথামৃত' থেকে শুনুন সেই অমৃত বাণী
শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব। সংগৃহীত চিত্র।
নবম পরিচ্ছেদ
চতুর্থ দর্শন
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) আনন্দ করিতেছিলেন ও মাস্টারকে এক-একবার দেখিতেছেন। দেখিলেন, তিনি অবাক হইয়া বসিয়া আছেন। তখন রামলালকে সম্বোধন করিয়া বলিলেন, দেখ এর একটু উমের বেশি কিনা, তাই একটু গম্ভীর। এরা এত হাসিখুশি করছে, কিন্তু এ চুপ করে বসে আছে। মাস্টারের বয়স তখন সাতাশ বৎসর হইবে।
কথা কহিতে কহিতে পরম ভক্ত হনুমানের কথা উঠিল। হনুমানের পট একখানি ঠাকুরের ঘরের দেওয়ালে ছিল। ঠাকুর বলিলেন, দেখ হনুমানের কি ভাব! ধন, মান, দেহসুখ কিছুই চায় না; কেবল ভগবান চায়! যখন স্ফটিকস্তম্ভ থেকে ব্রহ্মাস্ত্র নিয়ে পালাচ্ছে তখন মন্দোদরী অনেকরকম ফল নিয়ে লোভ দেখাতে লাগল। ভাবলে ফলের লোভে নেমে এসে অস্ত্রটা যদি ফেলে দেয়; কিন্তু হনুমান ভুলবার ছেলে নয়; সে ভাবলে।
আমার কি ফলের অভাব।
পেয়েছি যে ফল, জনম সফল,
মোক্ষ-ফলের বৃক্ষ রাম হৃদয়।।
শ্রীরামকল্পতরুমূলে বসে রই—
যখন যে ফল বাঞ্চা সেই ফল প্রাপ্ত হই।
ফলের কথা কই, (ধনি গো), ও ফল গ্রাহক নই;
যাব তোদের প্রতিফল যে দিয়ে।।
ঠাকুর এই গান গাহিতেছেন। আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির! বসিয়া আছেন—ফটোগ্রাফে যে রূপ ছবি দেখা যায়। ভক্তেরা এইমাত্র এত হাসিখুশি করিতেছিলেন, এখন সকলেই একদৃষ্টি হইয়া ঠাকুরের সেই অদ্ভুত অবস্থা নিরীক্ষণ করিতেছেন। দেহ শিতল হইল। মুখ সহাস্য হইল। ইন্দ্রিয়গণ আবার নিজের নিজের কার্য করিতেছে। চক্ষের কোণ দিয়া আনন্দাশ্রু বিসর্জন করিতে করিতে ঠাকুর (Ramakrishna) রাম রাম, এই রাম উচ্চারণ করিতেছেন।
মাস্টার ভাবিতে লাগিলেন, এই মহাপুরুষ কি ছেলেদের সঙ্গে ফচকিমি করিতেছিলেন? তখন যেন পাঁচ বছরের বালক!
ঠাকুর পূর্ববৎ প্রকৃতিস্থ হইয়া আবার প্রাকৃত লোকের ন্যায় ব্যবহার করিতেছেন। মাস্টারকে ও নরেন্দ্রকে সম্বোধন করিয়া বলিলেন, তোমরা দুজনে ইংরেজিতে কথা কও ও বিচার কর আমি শুনব।
মাস্টার ও নরেন্দ্র উভয়ে এই কথা শুনিয়া হাসিতেছেন। দুইজনে কিছু কিছু আলাপ করিতে লাগিলেন, কিন্তু বাংলাতে। ঠাকুরের (Ramakrishna) সামনে মাস্টার বিচার আর সম্ভব নয়। তাঁহার তর্কের ঘর ঠাকুরের কৃপায় এরকম বন্ধ। আর কিরূপ তর্ক-বিচার করিবেন? ঠাকুর আর একবার জিদ করিলেন, কিন্তু ইংরেজিতে তর্ক করা হইল না।
আরও পড়ুনঃ দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”
আরও পড়ুনঃ “দুরন্ত ছেলে বাবার কাছে যখন বসে, যেমন জুজুটি, আবার চাঁদনিতে যখন খেলে, আর এক মূর্তি”
আরও পড়ুনঃ "দু-চারটা মাছ এমন সেয়ানা যে, কখনও জালে পড়ে না"
তথ্যসূত্রঃ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত, ৯ম পরিচ্ছেদ,
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।