Elections: চলছে অষ্টাদশতম লোকসভা নির্বাচন, আগের গুলো সম্পর্কে জানেন?...
প্রতীকী ছবি।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: চলছে অষ্টাদশতম লোকসভা নির্বাচন। কেমন ছিল আগের সতরোটি সাধারণ নির্বাচন, বদলই বা হয়েছে কেমন, আসুন জেনে নেওয়া যাক (Lok Sabha Election 2024)।
দেশ স্বাধীনতা লাভ করে ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট। তারপর প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫২ সালে। মোট আসন ছিল ৪৯৯টি। নির্বাচন হয়েছিল ৬৮ দফায়। নির্বাচন শুরু হয়েছিল ১৯৫১ সালের ২৫ অক্টোবর। শেষ হয়েছিল পরের বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি। প্রথম ভোট পড়েছিল হিমাচল প্রদেশের ছিন্নি ও পাঙ্গি তহশিলে। সেবার কংগ্রেস পেয়েছিল ৩৬৪টি আসন। সিপিআই জিতেছিল ১৬টি কেন্দ্রে। সোশ্যালিস্ট পার্টি জিতেছিল ১২টি আসনে। বিআর অম্বেডকরের দল শিডিউল কাস্ট ফেডারেশন পেয়েছিল ২টি আসন। হেরে গিয়েছিলেন অম্বেডকর স্বয়ং। সংসদের প্রথম স্পিকার ছিলেন গণেশ বসুদেব মাভালঙ্কার।
দ্বিতীয় লোকসভা নির্বাচন হয়েছিল ১৯৫৭ সালে। আসন সংখ্যা ৫০৫। এবারও ক্ষমতায় আসে জাতীয় কংগ্রেস। প্রধানমন্ত্রী হন জওহরলাল নেহরু। ৪৯৪টি আসনে প্রার্থী দিয়ে নেহরুর দল জিতেছিল ৩৭১টিতে। সিপিআই জিতেছিল ২৭টিতে। প্রজা সোশ্যালিস্ট পার্টি জিতেছিল ১৯টি আসন। এবারের সাধারণ নির্বাচনে লড়াইয়ের ময়দানে ছিল ৪টি জাতীয় পার্টি, ১১টি রাজ্য পার্টি। ২২ জন মহিলাও জিতেছিলেন। এর সিংহভাগই মধ্যপ্রদেশ থেকে (Lok Sabha Election 2024)।
তৃতীয় সাধারণ নির্বাচনে আসন বেড়ে হয় ৫০৮টি। কংগ্রেস জয়ী হয় ৪৪.৭২ শতাংশ ভোট পেয়ে। সিপিআই পায় ৯.৯৪ শতাংশ ভোট। প্রথমবার নির্বাচনে লড়ে স্বতন্ত্র পার্টি পায় ৭.৮৯ শতাংশ ভোট। এবারও সরকার গড়ে কংগ্রেস। সরকার জড়িয়ে পড়ে চিন এবং পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে। নেহরু প্রধানমন্ত্রী ছিলেন স্বাধীনতার দিন থেকে ১৯৬৪ সালের ২৭ মে। এই সময় দুজন অ্যাক্টিং প্রাইম মিনিস্টার হন, একজন গুলজারিলাল নন্দ এবং অন্যজন লালবাহাদুর শাস্ত্রী। ১৯৬৪ সালের ১১ জানুয়ারির পর প্রধানমন্ত্রিত্বের রশি চলে যায় ইন্দিরা গান্ধীর হাতে। এই ভোটেই প্রথম সহজে মোছা যায় না এমন কালি ব্যবহার করা হয়।
এই সময় লোকসভার আসন বেড়ে হয় ৫২৩টি। আবারও জেতে কংগ্রেস। ইন্দিরা হন দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী। এই সময় কংগ্রেসের অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। কংগ্রেস দাবি করে সংসদের তারাই সংখ্যা গরিষ্ঠ। আর স্বতন্ত্র পার্টি এবং ভারতীয় জনসংঘের আসন সংখ্যা যথাক্রমে ৪৪ এবং ৩৫টি। কংগ্রেস, ডিএমকে এবং বিজেএস এস-এসটি আসনে ভালো ফল করে।
অন্তর্দ্বন্দ্বের জেরে ১৯৬৯ সালে ভাঙন ধরে কংগ্রেসে। ইন্দিরাকে দল থেকে বের করে দেওয়া হয়। নয়া দল গড়েন ইন্দিরা নাম হয় কংগ্রেস (আর), মাদার কংগ্রেসের নাম হয় ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস (ও)। কামরাজ, মোরারজি দেশাই, নিজলিঙ্গাপ্পা এবং এসকে পাতিল মাদার কংগ্রেসের নেতা।
১৯৭১ সালের এই নির্বাচনে মোট আসন ৫২১টি। ‘গরিবি হঠাও’ স্লোগান দেন ইন্দিরা। এই সময় স্বাধীন বাংলাদেশ আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৭৭ সালের ২৫ জুন দেশে জরুরি অবস্থা জারি করে ইন্দিরা সরকার। ইন্দিরার নেতৃত্বে কংগ্রেস জেতে ৩৫২টি আসনে। সিপিআই জিতেছিল ২৫টি আসনে। ২৩টি আসনে জেতে ডিএমকে।
আরও পড়ুুন: বাংলায় বিজেপির ক্লিন স্যুইপ, ভোটের ফল নিয়ে কী বললেন প্রধানমন্ত্রী মোদি?
এই সাধারণ নির্বাচনে আসন সংখ্যা ছিল ৫৪৪টি। মোরাজজি দেশাইয়ের নেতৃত্বে দেশে প্রথম অ-কংগ্রেসি সরকার গঠিত হয়। এই নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হয় কংগ্রেস। ২৯৫টি আসন পায় ভারতীয় লোকদল।
নির্বাচন হয় ১৯৮০ সালে। আসন সংখ্যা ৫৩১। ৩৫৩টি আসন নিয়ে ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস। প্রধানমন্ত্রী হন ইন্দিরা। পাঞ্জাবে মাথাচাড়া দেয় বিচ্ছিন্নতাবাদ। আন্দোলন দমনে অপারেশন ‘ব্লু-স্টার’ করে ইন্দিরা সরকার। ১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর শিখ দেহরক্ষীর গুলিতে নিহত হন ইন্দিরা।
ভোট হয় ১৯৮৪ সালে। আসন সংখ্যা ৫১৬। প্রধানমন্ত্রী হন ইন্দিরা-তনয় রাজীব। শিখ বিরোধী দাঙ্গা শুরু হয়। প্রকাশ্যে আসে বোফর্স কেলেঙ্কারি। এই সময় রাজনীতির ময়দানে আত্মপ্রকাশ করে বিজেপি।
১৯৮৯ সালে হয় নবম লোকসভা নির্বাচন। আসন ছিল ৫৩১টি। কেন্দ্রে আসে কোয়ালিশন সরকার। প্রধানমন্ত্রী হন জনতা দলের ভিপি সিং। মণ্ডল ও মন্দির রাজনীতি নিয়ে উত্তাল হয়ে ওঠে দেশ।
১৯৯১ সালের দশম লোকসভা নির্বাচনে আসন ছিল ৫০৮টি। প্রধানমন্ত্রী হন কংগ্রেসের নরসিমা রাও। সরকার গ্রহণ করে মুক্ত অর্থনীতি। বাবরি মসজিদ ধ্বংস হয়। মণ্ডল কমিশনের রিপোর্টের জেরে শুরু হয় হিংসা।
ভোট হয় ১৯৯৬ সালে (Lok Sabha Election 2024)। আসন সংখ্যা ৫৪৫টি। জনতা দলের নেতৃত্বে গঠিত হয় ইউনাইটেড ফ্রন্ট সরকার। এই নির্বাচনে বিজেপি জয়ী হয় ১৬১টি আসনে।
নির্বাচন হয় ১৯৯৮ সালে। আসন সংখ্যা ৫৪৫টি। অটল বিহারি বাজপেয়ীর নেতৃত্বে সরকার গড়ে বিজেপি। সরকার টিকেছিল ১৩ মাস।
নির্বাচন হয় ১৯৯৯ সালে। আসন সংখ্যা ৫৪৫টি। নির্বাচন হয় পাঁচ দফায়। ক্ষমতায় আসে বিজেপি। এই সময়ই হয় কার্গিল যুদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা, সোনালি চতুর্ভুজ প্রকল্প এবং পোটা আইন হয় এই সময়।
নির্বাচন হয় ২০০৪ সালে। আসন সংখ্যা ৫৪৫টি। কংগ্রেসের মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বে গঠিত হয় সরকার। আরটিআই, এনআরএজিএস চালু হয় এই সময়। ইন্দো-ইউএস সিভিল নিউক্লিয়ার ডিলও হয়। এবারই প্রথম ভোট গ্রহণ হয় ইভিএমে।
২০০৯ সালে হয় পঞ্চদশ লোকসভা নির্বাচন। সরকার গড়ে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ। লোকসভার স্পিকার হন মীরা কুমার।
ভোট হয় ২০১৪ সালে। ‘আচ্ছে দিনে’র স্লোগান দিয়ে ক্ষমতায় আসে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ। প্রধানমন্ত্রী হন নরেন্দ্র মোদি। জিএসটি, ডিমানিটাইজেশন, ডিজিটাল ইন্ডিয়া, স্বচ্ছ ভারত অভিযান চালু হয়। প্রথমবারের মতো নোটা চালু হয়।
নির্বাচন হয় উনিশে। ৩৫০টি আসনে জিতে ফের মোদির নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসে এনডিএ। নির্বাচন হয় ৫৪৩টি আসনে। সরকার সফলভাবে মোকাবিলা করে কোভিডের। লাগু হয় সিএএ। জম্মু-কাশ্মীর থেকে রদ করা হয় ৩৭০ ধারা। এবারই প্রথম ইভিএমের সঙ্গে যুক্ত হয় ভিভিপ্যাট। ২০২৪ সালের ১৯ এপ্রিল শুরু হয়েছে অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচন। নির্বাচন হবে সাত দফায় (Lok Sabha Election 2024)।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।