img

Follow us on

Friday, May 03, 2024

Chittagong : জালালাবাদের মুক্তি যুদ্ধ, ভারতের ইতিহাসে এক প্রেরণা ২২শে এপ্রিল ১৯৩০

Surya Sen: গীতা থেকেই রাজনীতির পাঠ নিতেন মাস্টারদা, বিশ্বাস, সততা আর জেদই ছিল জালালাবাদ মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা

img

২২শে এপ্রিল ১৯৩০, জালালাবাদ যুদ্ধ, ভারতের ইতিহাসে এক প্রেরণা।

  2024-04-22 21:18:15

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: জেলে মাস্টারদার সঙ্গী ছিল চারটি বই। গীতা, চণ্ডী, মহাভারত আর রবীন্দ্রনাথের ‘চয়নিকা’। খুব ভোরে উঠে ব্রহ্মসঙ্গীত গাইতেন বা স্তোত্রপাঠ করতেন। সকাল কেটে যেত গীতা পাঠে, দুপুরে পড়তেন মহাভারত। গীতা থেকেই রাজনীতির পাঠ নিতেন মাস্টারদা সূর্য সেন। গীতাই তাঁকে শিখিয়েছিল বিশ্বাস, সততা আর জেদকে সঙ্গী করে কীভাবে মুক্তির স্বপ্ন দেখা যায়। নিজের অধিকারের লড়াই লড়া যায়। সেই জেদকে সঙ্গী করেই একদল বাঙালি বিপ্লবীকে নিয়ে ব্রিটিশদের বৃহৎ সৈন্যদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন মাস্টারদা। দিনটি ছিল ২২ এপ্রিল ১৯৩০

জালালাবাদের পাহাড়ে মুক্তিযুদ্ধ

১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রামে হল সশস্ত্র অভ্যুত্থান। ২২শে এপ্রিল ১৯৩০। জালালাবাদ যুদ্ধ। মাস্টারদা পুরো দলবলসহ এসে পৌঁছলেন জালালাবাদ পাহাড়ের নিচে। সিদ্ধান্ত হল পাহাড়ে চড়ার। ১৮ থেকে ২২ এপ্রিল, চারটে দিন পাহাড়েই কেটেছিল বিপ্লবীদের। খাবারও জোটেনি কিছু। বিপ্লবী লোকনাথ বল জানিয়েছিলেন মাঝে মাঝে পাহাড়ের কাঁচা আম, তেঁতুল পাতা, দু একটা চুরি করে আনা বিস্কুট, একবেলা সামান্য খিচুড়ি আর ঘোলা জল খেয়ে এই চার দিন কাটিয়েছিলেন তাঁরা। সূর্য সেন, নির্মল সেন, অম্বিকা চক্রবর্তী ও লোকনাথ বল ছিলেন বিপ্লবী দলটির নেতা। তাঁদের সঙ্গী ছিলেন ৬৩ জন মুক্তি-পাগল কিশোর, ছাত্র ও তরুণ বিপ্লবীরা। সর্ব কনিষ্ঠ বিপ্লবীর বয়স ছিল ১৪ কি ১৫ বছর। 

পাহাড় থেকে লড়াই

২২ এপ্রিল, ১৯৩০ ওইদিন সবাই যখন ভোরবেলা মাস্টারদার নেতৃত্বে পাহাড়ে চড়েছেন সেইদিন বিকেল চারটের সময় চট্টগ্রাম নাজিরহাট শাখা রেল লাইনের ‘ঝরঝরিয়া বটতলা’ মসজিদের পাশে এসে থামল একটি ট্রেন। রেলগাড়ি থেকে নেমে এল ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রাইফেলস ও সুর্মা ভ্যালি লাইট ইনফ্যান্ট্রির সশস্ত্র সেনাবাহিনীর দল। তারা রওনা হল জালালাবাদ পাহাড়ের উদ্দেশ্যে। পাহাড়ের দুদিকে অন্য দুটো উঁচু পাহাড়ের মাথায় বসানো হল মেশিনগান। ইতিমধ্যে বিপ্লবী লোকনাথ বলের নির্দেশে আটভাগে বিপ্লবীদের বাহিনীকে পাহাড়ের চারপাশে সাজানো হল। কিছুক্ষণ পর দেখা গেল জালালাবাদ পাহাড়ের দুই দিক দিয়ে বহুসংখ্যক শত্রুপক্ষের সৈন্য ওপরে উঠে আসবার চেষ্টা করছে। তারা যখন পাহাড়ের প্রায় অর্ধেকটা উঠে এসেছে, এমন সময় লোকনাথ বলের আদেশে বিদ্রোহী বাহিনী বীর বিক্রমে তাদের ওপরে প্রচন্ডভাবে গুলিবর্ষণ আরম্ভ করল। তাদের অনেকেই প্রাণ হারিয়ে গড়িয়ে নিচে পড়ে গেল এবং অনেকেই গুরুতরভাবে আহত হয়ে পড়ে রইল। বাকি সকলেই পেছনে ফিরে ছুটে পালিয়ে গিয়ে দূরে একটি গভীর নালার মধ্যে আশ্রয় নিল। কয়েক মিনিট পরে তারা আবার বেপরোয়া হয়ে পাহাড়ে উঠবার চেষ্টা করল। কিন্তু এবার তারা পাহাড়ের অর্ধেকটুকুও উঠতে পারল না। ওপরের বিপ্লবীদের প্রচন্ড গুলিবর্ষণে তাদের অনেকেই পূর্বের ন্যায় নিহত ও আহত হল এবং কয়েক সেকেন্ড পরে তারা আবার পালিয়ে গেল। তারপর অকস্মাৎ জালালাবাদ পাহাড়টির দুদিকের দুটি উচ্চতর পাহাড় থেকে জালালাবাদ পাহাড়ের ওপর মেশিনগানের গুলিবর্ষণ আরম্ভ হল। বিপ্লবীদের পক্ষ থেকেও প্রচন্ডভাবে প্রত্যুত্তর দেওয়া হল। কিন্তু শত্রুপক্ষের মেশিনগানের গুলিতে হরিগোপাল বল, নির্মল লালা, প্রভাস বল, পুলিন ঘোষ, মধুসূদন দত্ত, জিতেন দাশগুপ্ত, নরেশ রায়, বিধু ভট্টাচার্য, ত্রিপুরা সেন, শশাঙ্ক দত্ত এবং মতি কানুনগো প্রাণ হারিয়ে শহিদের অমরত্ব লাভ করেন। 

বাঙালি বিপ্লবীদের বীর গাথা

সে যুদ্ধে প্রথম শহীদ হয়েছিলেন লোকনাথ বলের ছোট ভাই ১৬ কি ১৭ বছরের বিপ্লবী হরিগোপাল (টেগরা) বল। ১২জন বিপ্লবী বীরের মৃত্যু বরণ করলেন। কিন্তু হার মানলেন না। রাতের অন্ধকারে যুদ্ধ-বিরতি নিতে বাধ্য হল ব্রিটিশ সেনারা। রাতের অন্ধকারেই একটা একটা করে দেহ নিয়ে আসা হল মাস্টারদার কাছে। মাস্টারদা শহিদদের নিথর বুকের ওপর কান রেখে বসে থাকেন কিছুক্ষণ, যদি হৃদপিণ্ডের স্পন্দন শোনা যায়! যদি প্রাণ থাকে, যদি বাঁচানো যায়। নির্মল লালার মুখে যেন তখনও হাসি লেগে আছে। ওর মাথাটা নিজের কোলে তুলে নিয়ে অনেকক্ষণ চেয়ে থাকেন সর্বকনিষ্ঠ এই শহিদের মুখের দিকে। তারপর নির্মলের মাথাটা অতি যত্নে মাটিতে নামিয়ে রেখে উঠে দাঁড়ালেন তিনি। সামরিক কায়দায় অভিবাদন জানিয়ে ধীরে ধীরে বললেন, চলো এবার সবাই। জালালাবাদ পাহাড়ে শহিদদের স্যালুট দিয়ে জীবিত বিপ্লবীরা ছড়িয়ে পড়লেন এ দিক-ও দিক। আহত যে সব সঙ্গীরা চলার ক্ষমতা হারিয়েছিলেন তাঁদেরকে বহন করে এনেছিলেন অন্যেরা। 

আরও পড়ুনঃ প্রথমবার পেট্রাপোল পেরিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছালেন মহিলা ট্রাকচালক

মাস্টারদার আত্মত্যাগ

যুদ্ধের পর সূর্য সেন, নির্মল সেন, লোকনাথ বল প্রমুখদের আশ্রয় দিয়েছিলেন কোয়াপাড়া গ্রামের বিনয় সেন। সূর্য সেন ছোট ছোট দলে বিভক্ত করে তার লোকজনকে পার্শ্ববর্তী গ্রামে লুকিয়ে রাখেন এবং বিপ্লবীরা পালাতে সক্ষম হয়। কলকাতা পালিয়ে যাওয়ার সময় কয়েকজন গ্রেফতার হয়। কয়েকজন বিপ্লবী পুনরায় সংগঠিত হয়। ২৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৩২ সালে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের নেতৃত্বে আবারও আন্দোলন সংগঠিত করেন। মাস্টারদা-কে ধরার জন্য ব্রিটিশ সরকার ৫০০০ টাকার পরিবর্তে ১০,০০০ পুরস্কার ঘোষণা করে। ১৯৩৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ধরা পড়েন সূর্য সেন। ১৯৩৪ সালের ১১ জানুয়ারি ফাঁসি হয় সূর্য সেনের। এক চিঠিতে মাস্টারদা লিখেছেন, ‘গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলছেন, মানুষ যেমন জীর্ণবস্ত্র পরিত্যাগ করে নূতন বস্ত্র গ্রহণ করে, সেরূপ আত্মা জীর্ণ শরীর ত্যাগ করে অন্য নূতন দেহ ধারণ করে।’ এই উপলব্ধি থেকেই হয়ত মৃত্যুভয় না করেই মাস্টার দা ও তাঁর শিষ্যরা লড়াই করে গিয়েছেন আজীবন। তাঁদের ছিল একটাই স্বপ্ন স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন, উন্নত ভারতের স্বপ্ন, ভারতের অমৃতকালের স্বপ্ন।

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

Tags:

Madhyom

bangla news

Chittagong British Armoury Raid 1930

Chittagong Revolutionary

Surya Sen


আরও খবর


খবরের মুভি


ছবিতে খবর