পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়, তাঁর “একাত্ম মানবতাবাদ” দর্শনে কী বলেছেন?
পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়। সংগৃহীত চিত্র।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: জাতীয়তাবাদী লেখক, রাজনীতিবিদ, দার্শনিক এবং সমাজ সংস্কারক হিসাবে বিশেষ ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় (Pandit Deendayal Upadhyay)। আজ তাঁর জন্মজয়ন্তী। অত্যন্ত একটি সাধারণ নিম্নবিত্ত পরিবারের মধ্যে জন্ম হয়েছিল তাঁর। ভারতীয় ইতিহাসতত্ত্ব, শিক্ষা, চেতনা, আধ্যাত্মিকতা, রাজনীতি এবং সমাজতত্ত্বের উপর প্রচুর লেখালেখি করে গেছেন তিনি। ভারতীয় জনসংঘ দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। পরে সভাপতি হিসাবে নির্বাচিত হয়ে ছিলেন তিনি। “একাত্ম মানববাদ” দর্শনের স্রষ্টা ছিলেন। রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের প্রচারক হিসাবেও অনক দিন ভারত রাষ্ট্র পুনর্নির্মাণের জন্য সমর্পিত ছিলেন।
পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় (Deendayal Upadhyaya) উত্তরপ্রদেশের বৃজভূমিতে জন্ম গ্রহণ করেন ১৯১৬ সালের ২৫ সেপ্টেম্বরে। মামার বাড়িতে থেকে মেট্রিকুলেশন, ইন্টার মিডিয়েট পরীক্ষা দেন। এরপর বিএ পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। অত্যন্ত মেধাবী এবং পড়াশুনায় আগ্রহী ছাত্র ছিলেন। এরপর ১৯৩৭ সাল থেকে নিজেকে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘে নিবেদন করেন। অনেক দিন সামজিক আন্দোলন এবং ভারত রাষ্ট্র পুনর্নির্মাণের জন্য নিজেকে নিয়োজিত করেন। এরপর সংঘের প্রচারক হয়ে যান। ১৯৩৯ সালে নাগপুরে সংঘের প্রথমবর্ষ এবং ১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বর্ষ সংঘ শিক্ষাবর্গ করেন। এরপর উপলব্ধি করেন সমাজকে সংস্কার করে ভরতের স্বাধীনতা অর্জন করা একান্ত প্রয়োজন। ধীরে ধীরে সমাজিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন।
পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় (Pandit Deendayal Upadhyay) ১৮৬৭ সালে কালিকটে ভারতীয় জন সংঘের সভাপতি রূপে নির্বাচিত হন। তিনি ভারতীয় পরম্পরা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাসবোধের বাইরে গিয়ে ভারতের চিন্তাকে কখনই প্রকাশ করতেন না। ভারতীয় মানসিকতার মধ্যে বিদেশী সংস্কৃতির প্রভাবকে মুক্ত করার কথা বলতেন। এই জনসংঘের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন বাংলার আরেক রাজনীতিবিদ ডক্টর শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। বর্তমান ভারতের ভারতীয় জনতা পার্টি হল যথার্থ জনসংঘের উত্তরসুরী রাজনৈতিক দল।
পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় (Pandit Deendayal Upadhyay) অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র যেমন ছিলেন, সেই সঙ্গে প্রচুর লেখালেখি করেছেন। ভারতীয় পুরাণ, উপনিষদ, বেদ, রামায়ণ, মহাভারতের উপর প্রচণ্ড আগ্রহ ছিল তাঁর। তিনি ভারতীয় হিন্দু রাজাদের বিষয়ে উপান্যাস লেখেন। “সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত” এবং “জগতগুরু শঙ্করাচার্য” নামক দুটি উপন্যাস লেখেন। এগুলি প্রকাশ হয়েছিল ১৯৪৬ এবং ১৯৪৭ সালে। আরএসএসের প্রচারক থাকার সময় ১৯৪৫ সালে মসিক “রাষ্ট্রধর্ম” এবং সপ্তাহিক “পঞ্চজন্য” সম্পাদনা করে প্রকাশ করতেন। এছাড়াও দৈনিক “স্বদেশ” নামক পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন তিনি। ইংরেজরা চক্রান্ত করে দেশকে ভাগ করেছিল, তাই তিনি দেশভাগের জন্য অত্যন্ত ব্যথিত হন। ১৯৬৮ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মুঘলসরাই স্টেশনে রহস্যজনক ভাবে তাঁর মৃত্যু হয়।
পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় (Pandit Deendayal Upadhyay) মনে করতেন পুঁজিবাদ, সমাজবাদ, সাম্যবাদ, ব্যক্তি নির্ভর ভাবনার মধ্যে একটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এই সব মতবাদের শিকড় দেশে নয় বিদেশে অর্থাৎ ভারতের বাইরে। এই ভাবনাগুলি মানুষের মূল্যবোধের মধ্যে মানবতার পরিসরকে অনেক দূরে নিয়ে চলে গেছে। তাই ভারতীয়ত্বকে সন্ধান করা একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করতেন। আর তাই তিনি তাঁর একাত্ম মানবতাবাদে, মানুষের পরস্পর দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষের পরিসরকে মানবতার সমন্বয় এবং আত্ম্যানুভবের পরিভাষায় মানব দর্শনকে প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর এই দর্শনে ব্যক্তিকে সমাজ-দেশ-রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেন। তিনি স্পষ্ট ভাবে দেখান, ভারতীয় সমাজ পরিবারকে বর্জন করে কখনই দাঁড়িয়ে থাকতে পরে না। ব্যক্তির যেমন পরিবারের প্রতি দায়িত্ব থাকে, ঠিক তেমনি পরিবার তার অধিকারকে সুরক্ষিত করে। আবার পরিবার, সামজের প্রতি কর্তব্য পালন করলে, সমাজও পরিবারের অধিকারকে সুরক্ষিত করে। ঠিক তেমনি সমাজ, রাষ্ট্রের জন্য কর্তব্য পালন করে আর রাষ্ট্র, সমাজের অধিকারকে সুরক্ষিত করে। এই ভাবেই মানবজাতি পরস্পরের মধ্যে মেলবন্ধনে একাত্মভাবের প্রতি বিশ্বাসের নাম হল মানবাতাবাদ। সকালের কাছে এক সত্যকে অনুভব করার নাম হল একাত্ম মানবদর্শন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের , Twitter এবং Google News পেজ।