চাকরি খাদক থেকে বালি খাদক, শান্তনুর উত্থানের নেপথ্যে কে?
শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় (TMC Leader Santanu Banerjee)। হুগলি জেলা যুব সভাপতি থেকে জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ। চাকরি দুর্নীতির অন্যতম খলনায়ক। কিন্তু এই চাকরি খাদকের পাশাপাশিই তাঁর আর এক পরিচয় উঠে আসছে। আমাদের অন্তর্তদন্তে ফুটে উঠেছে তাঁর বালি খাদকের চেহারা। বেআইনি বালি খাদান থেকে কোটি কোটি টাকা পাচারের সঙ্গেও যে তিনি জড়িত, তা সামনে আসছে বর্ধমান থেকে হুগলির একাধিক বালি খাদান অঞ্চলের লোকেদের সঙ্গে কথা বলে। কিন্তু কীভাবে উত্থান তাঁর? সামান্য একজন মোবাইলের ব্যবসা দিয়ে শুরু হয়েছিল তাঁর জীবন। তারপর বাবার মৃত্যুর পর খানাকুলের রাজহাটীতে বিদ্যুৎ দফতরে ক্যাশিয়ারের চাকরি। প্রায় ১৫ বছর আগে আরামবাগের বালি ব্যবসায় চোখ পড়ে। এরপর ঘনিষ্ঠ হন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। জেলা যুবা সভাপতি হন তিনি। অভিষেক তখন যুবার সর্বভারতীয় সভাপতি। জেলায় জেলায় তখন বাছা হচ্ছে শান্তনুদের মতো অনেক যুবাকে। তাঁরাই হয়ে উঠছেন তৃণমূলের পরবর্তী প্রজন্মের কর্ণধার। তাঁদের অঙ্গুলি হেলনে সবকিছু চলছে। যেমন হুগলি থেকে বর্ধমানের বিস্তীর্ণ অংশে বেআইনি কাজ হতো শান্তুন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে। অভিযোগ, চনন্দনগর, চুঁচুড়া, বলাগড় থেকে তারকেশ্বর ছুঁয়ে আরামবাগ পর্যন্ত এক অন্ধকার সাম্রাজ্য তৈরি হয়েছিল এই শান্তনুদের তত্ত্বাবধানে। বেআইনি ভাবে কোটি কোটি টাকা তুলত এই চক্র। সব জেনেও চুপ থাকতো পুলিশ। সাধারণ মানুষ ক্ষোভে ফুঁসত, কিন্তু ভয়ে কিছু বলত না।
আরামবাগে কীভাবে বালি মাফিয়ারাজ চালানো যায়, সেই পরিকল্পনা শান্তনুদের মস্তিষ্কপ্রসূত বলে অভিযোগ উঠছে। এই বালির কারবার চলতো মুণ্ডেশ্বরী, দামোদর ও দ্বারকেশ্বর নদীতে। একপ্রকার বালি লুঠ করে পাচার করে দেওয়া হতো বলে অভিযোগ। এখন নানা তথ্য সামনে আসার পর শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, দুর্নীতি চক্রের মাস্টারমাইন্ড কুন্তল। কুন্তল নাকি কয়েকশো কোটি টাকা তুলেছে। এখন সেই টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে ভিন রাজ্যে।শান্তনুর এই দাবির পর প্রশ্ন উঠছে, কুন্তল তো এখন জেলে। তাহলে কার তত্ত্বাবধানে এই টাকা অন্য রাজ্যে চলে যাচ্ছে? দুর্নীতির বিশাল সাম্রাজ্য প্রকাশ্যে এসে যাওয়ার পর কি একে অপরকে দোষারোপের খেলায় নেমেছেন তাঁরা? তাহলে কার নির্দেশে এসব চলছে? জেলায় জেলায় শান্তনুদের মতো আর কত যুব নেতা ছড়িয়ে আছে? তাদের উত্থানের নেপথ্যে কে? অসংখ্য প্রশ্ন সামনে আসছে। আমরা জানি, প্রশ্ন উঠছে আপনাদের মনেও। সবাই চায়, সামনে আসুক সত্য ঘটনা। জেলা স্তর থেকে ওপর মহল, দুর্নীতি চক্রের সঙ্গে যারা জড়িত, ধরা পড়ুক সকলেই। বাংলা জানুক, কীভাবে বাংলাকে নয়ছয়ের রাস্তায় নেমেছিল শাসক কুলের একাংশ।
Tags: