প্রাথমিকে সিভিক পুলিশ!শিক্ষার কফিনে শেষ পেরেক?
চাকরি চুরি হয়েছে বাংলায়। ইচ্ছে মতো তা বিক্রি করে গেছে শাসক। ইডির তদন্তে একের পর এক তথ্য সামনে আসতেই শুরু হয়ে গেছে দোষারোপের পালা। দুর্নীতির পিরামিডের মাথা খোঁজার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা। পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতির প্রতিবাদে এদিন দিল্লিতে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে বিক্ষোভে সামিল হন বিজেপি সাংসদরা। হাজির ছিলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও। বাংলায় শাসকের দুর্নীতির প্রতিবাদে স্লোগানে সোচ্চার হন তাঁরা। অন্যদিকে শিয়ালদায় চোর ধরোর দাবি তুলে চলমান প্রদর্শনীতে সামিল হন বিজেপি বিধায়করা।
পরীক্ষায় সাদা পাতা জমা দিয়ে চাকরি পাওয়া থেকে শুরু করে যোগ্যদের পরীক্ষার নম্বর কমিয়ে দেওয়া। একের পর এক দুর্নীতির ছবি যখন স্পষ্ট হয়ে গেছে, তখন জেলা প্রশাসনের আর এক সিদ্ধান্তে শিক্ষার অরাজক অবস্থা স্পষ্ট হয়ে গেছে। সম্প্রতি একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বাঁকুড়া জেলা পুলিশ। সেখানে দেখা যাচ্ছে, সিভিক ভলান্টিয়ার্স দিয়ে প্রাথমিক স্কুলে পড়ানোর কথা। যেখানে দিনের পর দিন হকের চাকরির দাবিতে অনশন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন যোগ্য প্রার্থীরা, তখন জেলা প্রশাসন কীভাবে এমন সিদ্ধান্ত নেয়, তা নিয়ে রাজ্যের গোটা শিক্ষক মহলই অবাক। এভাবে শিক্ষার অন্তর্জলী যাত্রায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। টুইট বার্তায় তিনি লিখেছেন, রাজ্যে ৮২০৭টি সরকারি স্কুলে ছাত্র ছাত্রীদের সংখ্যা ৩০ এর কম। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ৩৬ শতাংশ। সরকার ফন্দি এঁটেছে শিক্ষার মান নামিয়ে দেওয়ার। আগামী প্রজন্মকে চাকরির পরীক্ষায় বসার অযোগ্য বানানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে লেগে পড়েছে সরকার। প্রতিকারের জন্য রাজ্যবাসীকে ভাবার আর্জি জানিয়েছেন তিনি।
তবে এই বিতর্কের মধ্যেই বাঁকুড়া পুলিশের অঙ্কুর প্রকল্প স্থগিত করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। এধরনের প্রকল্পের অনুমোদনের জন্য জেলা প্রশাসনকে চিঠি লিখতে বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী। ফলে বিতর্ক যাই হোক, প্রকল্প যে সরকার বাতিল করছে না, তা স্পষ্ট হয়ে গেছে। স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, রাজ্যে সুস্থ শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রাখতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ সরকার। এই ব্যর্থতা ফুটে উঠেছে বারাসত পুরসভার এক নির্দল কাউন্সিলরের শুভেচ্ছা বার্তায়। সেখানে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানাতে গিয়ে তিনি লিখেছেন, ২০০৬ সালে তাঁর নিয়োগ হয়েছিল। মানে তৃণমূল জমানায় তাঁর চাকরি হয়নি। ফলে এক কাউন্সিলরের এ হেন পোস্ট চোখ টেনেছে গোটা রাজ্যবাসীর। চৈতালী ভট্টাচার্য নামে ওই কাউন্সিলরের দাবি, নিজের সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা তুলে ধরতেই তাঁর এই উদ্যোগ।
ফলে বার্তা আসছে সব মহল থেকেই। বাংলা ডুবছে সর্বক্ষেত্রে। যেদিকেই চোখ যায়, দুর্নীতি আর দুর্নীতি। সবাই দেখছে, কী হচ্ছে। কিন্তু কেউ তার দায় নিতে চাইছে না কেউ। জেল বন্দি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় দায় চাপাচ্ছেন বোর্ডের ওপর। জেল বন্দি বোর্ড কর্তারা আবার দায় এড়াতে চাইছেন নিজেদের। ফলে এই নজিরবিহীন কেলেঙ্কারির মূল হোতা কে বা কারা, তা নিয়ে সাসপেন্স বজায় রয়েছে।