RG Kar Medical: অপছন্দের পড়ুয়াকে ‘করিয়ে দিতেন ফেল’! সন্দীপ ‘কুকর্মের মাস্টারমাইন্ড’, দাবি আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের...
সন্দীপ ঘোষ (সংগৃহীত ছবি)
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: সোমবারই পদত্যাগ করেন আরজি করের (RG Kar Medical) অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ (Sandip Ghosh)। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই রাজ্য সরকারের নয়া নির্দেশিকা সামনে আসে, যেখানে দেখা যায় কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যালের (National Medical College) অধ্যক্ষ হিসেবে বদলি হয়েছেন তিনি। এরপরে ন্যাশনাল মেডিক্যালের পড়ুয়ারা বিক্ষোভ আন্দোলনে নামেন, তাঁরা তালা লাগিয়ে দেন অধ্যক্ষের জন্য নির্ধারিত ঘরে। আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের একটাই দাবি, কোনও অবস্থাতেই তাঁরা সন্দীপ ঘোষকে অধ্যক্ষ হিসেবে মানবেন না।
প্রসঙ্গত, জুনিয়র চিকিৎসকদের লাগাতার আন্দোলনের ফলে চাপে পড়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন সন্দীপ ঘোষ। তবে সংবাদমাধ্যমের সামনে তাঁর বিবৃতি, চাপে নয়! স্বেচ্ছায় এমন পদত্যাগ। সকালে পদত্যাগ বিকালে আবার নতুন করে নিয়োগের ঘোষণা। বোঝাই যাচ্ছে, কতটা প্রভাবশালী সন্দীপ ঘোষ। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ থাকা অজয় কুমার রায়কে নিমেষের মধ্যে বদলি করা হয় স্বাস্থ্য ভবনে। কারণ সন্দীপ ঘোষকে অধ্যক্ষ হতে হবে। কোনও কোনও মহল বলছে, ‘‘এখানেই বোঝা যাচ্ছে সন্দীপ ঘোষ (Sandip Ghosh) ঠিক কতটা প্রভাবশালী! তাঁর জন্য বর্তমান অধ্যক্ষকেও বদলি করা হয়।’’
তবে এই প্রথম নয়। সন্দীপ (Sandip Ghosh) ঠিক কতটা প্রভাবশালী, তা বোঝা যায় ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ঘটনায়। সে সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পেন ও দুবাই সফরে গিয়েছিলেন। তার আগে, সন্দীপ ঘোষকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে অস্থি বিভাগে বদলি করা হয়। ২১ দিনের মাথায় কোনও এক জাদুবলে তিনি ফের ফিরে আসেন আরজি করে (RG Kar Medical)। এমন বদলি কার্যত নজিরবিহীন। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যায় না। প্রসঙ্গত আরজি করে নৃশংস কাণ্ড ঘটার পর থেকেই আন্দোলনকারীরা নিশানা করছেন সন্দীপ ঘোষকে। তাঁর বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ উঠছে যে হাসপাতালে নানা দুষ্কর্মের মদত দেন তিনি। বেআইনি নিয়োগও করান। তবে প্রভাবশালী হওয়ায় সন্দীপের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে পারেন না।
আরজি কর (RG Kar Medical) কাণ্ড সামনে আসতেই নানা অভিযোগ ওঠে সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে। এমনকি ওই চিকিৎসক আত্মহত্যা করেছেন বলে, বাড়িতে ফোন করে বলার নেপথ্যেও সন্দীপ ঘোষ (Sandip Ghosh) রয়েছেন বলে দাবি করে আন্দোলনকারীরা। সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে এমন ক্ষোভ অবশ্য শুধুমাত্র জুনিয়র ডাক্তারদেরই নয়, বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠনেরও রয়েছে। তাঁরা বলছেন, ‘‘উনি ইস্তফার নাটক করছেন! তার নাকি খুব দুঃখ হয়েছে, ওঁকে কোথাও বদলি নয়, ওঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারী তদন্ত করতে হবে। উনি ঘটনার তথ্য প্রমাণ নষ্ট করছেন।’’
প্রভাবশালী সন্দীপ (Sandip Ghosh) স্বাস্থ্য ভবনে নিজের সাম্রাজ্য বানিয়ে ফেলেছিলেন বলে দাবি করেন অনেকে। সন্দীপের দাপট-প্রভাবের সামনে টিকতে পারে না কেউই। কোনও ডাক্তারি পড়ুয়া তাঁর অপছন্দের হলে তাঁকে ফেল করিয়ে দিতেন নাকি সন্দীপ, এমন অভিযোগ করছেন আন্দোলনকারীরা। আবার আরজি কর (RG Kar Medical) হাসপাতালে দুর্নীতি, অনিয়ম, বেনিয়ম যে রয়েছে তার পিছনে থাকতেন সন্দীপ, এমনটাই অভিযোগ। একাধিক বার তাঁকে বদলি করা হয়। কিন্তু প্রভাবশালী সন্দীপ বরাবরই ফিরে আসেন আরজি করের অধ্যক্ষ হয়ে। সমালোচকরা বলছেন, ‘‘আরজি করে কী আছে! সেটা হয়তো সন্দীপই বলতে পারবেন, এই হাসপাতালের প্রতি কেন সন্দীপের এত মোহ!’’
একবার সন্দীপ ঘোষের বদলে উলুবেড়িয়ার শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ সনৎ ঘোষকে আরজি করে আনা হয়েছিল। কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারণে অল্প সময়ের মধ্যে ফের সন্দীপ আবার ফিরে আসেন আরজি করে (RG Kar Medical)। আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা তাঁকে ‘কুকর্মের মাস্টারমাইন্ড’ বলছেন। তবে সন্দীপ দাবি করেন, তিনি দুষ্কর্ম রুখে দিয়েছেন! আরজি করে তিনি কেমন দুষ্কর্ম রুখেছেন তা সাম্প্রতিক ঘটনাবলী সামনে আসার পরই বোঝা যাচ্ছে, নতুন করে ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। সন্দীপ দাবি করেন, আরজি কর ছিল ঘুঘুর বাসা, তোলাবাজি চলত দেদার এবং তাতে নাকি নেতাদের মদতও ছিল। তিনি এসে সবকিছু বন্ধ করেছেন। এখন নাকি আরজি করে তোলাবাজি হয় না, ঘুষ দিতে হয় না এবং রোগীরদের পরিষেবা যথেষ্ট! সন্দীপ আরজি কর কেমন নিজের হাতে সাজিয়েছেন? জুনিয়র চিকিৎসরা বলছেন, আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের গায়ে লাথি মেরে অধ্যক্ষের রুমে ঢোকেন তিনি।
সন্দীপ (Sandip Ghosh) যে শাসকদলের ঘনিষ্ঠ, একথা সকলেই জানেন। শাসক দলের বদান্যতায় তাঁর এত প্রভাব-প্রতিপত্তি। কলকাতা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান হলেন এন্টালির তৃণমূল বিধায়ক স্বর্ণ কমল সাহা। এবার সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে দেখা গেল ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যানকে। জানা গিয়েছে, সন্দীপ ঘোষ আগে কলকাতা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের এমএসভিপির দায়িত্বে ছিলেন। সেই সময়ে চিকিৎসক থেকে অনেক মহলই তাঁর ওপরে ক্ষুব্ধ থাকত বলে দাবি স্বর্ণকমলের। কারণ তিনি নিজের মতো করে চলেন, সহজে যে কোনও চিকিৎসক তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পারতেন না। অ্যাপয়েন্টমেন্ট না নিয়ে কেউ দেখা করতে এলে দীর্ঘক্ষণ তাঁকে বাইরে বসিয়ে রাখা হত। এরকম পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে চলতে চলতে তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। সন্দীপকে (Sandip Ghosh) ন্যাশনালে বদলির বিষয়ে স্বর্ণ কমল সাহা রীতিমতো বিস্ফোরক হয়ে উঠলেন সাংবাদিকদের সামনেই। তাঁর মতে, ন্যাশনালের নজরদারি বাড়াতে হবে, যাতে আরজি করের (RG Kar Medical) মতো দুর্ঘটনা এখানে না ঘটে!
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।