CBI: খামতিতে ভরা নির্যাতিতার সুরতহাল রিপোর্ট! কী বললেন সিবিআই কর্তা?...
নির্যাতিতার সুরতহাল রিপোর্ট দেখে হতবাক সিবিআই (সংগৃহীত ছবি)
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: আরজি কর হাসপাতালে (RG Kar) তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনার ময়না তদন্ত করা নিয়ে প্রথম থেকেই বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে পরিবারের আপত্তির পরও একরকম জোর করেই তড়িঘড়ি ময়না তদন্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ। সূর্যাস্তের পর ময়না তদন্ত করা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এবার ময়না তদন্তের পাশাপাশি নির্যাতিতার সুরহতালের রিপোর্ট নিয়েও সিবিআই (CBI) আধিকারিকদের মনে একাধিক প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক সিবিআই কর্তা এমনও দাবি করেছেন, তিনি তাঁর কর্মজীবনে এমন ভুলে ভরা সুরতহাল রিপোর্ট (Inquest Report) কখনই দেখেননি।
সিবিআই সূত্রকে উদ্ধৃত করে আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চিকিৎসক-পড়ুয়ার (RG Kar) খুন, ধর্ষণের ঘটনায় মাত্র ২০ মিনিটে সুরতহাল (ইনকোয়েস্ট) এবং ১ ঘণ্টা ১০ মিনিটে ময়না তদন্তের রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। ধর্ষণ ও খুনের তদন্তে এ দু'টিই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ আদালত গ্রাহ্য তথ্য প্রমাণ। আর ওই দু'টো রিপোর্টেই পর পর ধোঁয়াশা সৃষ্টি করা হয়েছে বলে দাবি তদন্তকারীদের। ময়না তদন্তের আগে একজন বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট মৃতদেহ পর্যবেক্ষণ করে রিপোর্ট প্রস্তুত করেন। তাকেই সুরতহাল রিপোর্ট বলা হয়। তিনি মৃতদেহের নানা ক্ষতচিহ্ন খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে যে রিপোর্ট দেন, তার ভিত্তিতে ময়না তদন্ত করা হয়। এই পরীক্ষায় সাধারণত ঘণ্টাখানেক সময় লাগে। মাত্র ২০ মিনিটে কী করে এই পরীক্ষা করা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তদন্তকারীদের (CBI) সূত্রে দাবি, রিপোর্টে বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট লিখেছেন, তিনি বিকেল ৪টে ২০ মিনিট থেকে ৪টে ৪০ মিনিট পর্যন্ত মৃতদেহ পর্যবেক্ষণের রিপোর্ট (RG Kar) তৈরি করেছেন। দেহ উল্টে পর্যন্ত দেখা হয়নি। যে ভাবে দেহ শুইয়ে রাখা হয়েছিল, শুধুমাত্র তা ওপর-ওপর দেখে চটজলদি রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে বলেই রিপোর্ট পড়ে মনে হয়েছে তদন্তকারীদের।
আরও পড়ুন: কলকাতাকে ‘পরম রুদ্র সুপার কম্পিউটার’ উপহার মোদির, সহজ হবে জটিল গবেষণা
আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে সিবিআই (CBI) সূত্রকে উদ্ধৃত করে আরও বলা হয়েছে, মৃতার পেটের কোন কোন অংশে কী ধরনের আঘাত, তারও খুঁটিনাটি বলা নেই। রিপোর্টে মৃতদেহের গোপনাঙ্গে রক্তের কথা রয়েছে। কিন্তু, রক্তপাতের কারণ ব্যাখ্যা করা হয়নি। গোপনাঙ্গের পাশে একটি ভাঙা 'হেয়ার ক্লিপ' পাওয়া গিয়েছে, বলা হয়েছে। কিন্তু, তা কতটা দূরে, সেই তথ্য অস্পষ্ট বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা (RG Kar)। মৃতার পোশাকের বিষয়টিও স্পষ্টভাবে বলা নেই। সুরতহাল রিপোর্ট তৈরির সময়ে দু'জন চিকিৎসককে সাক্ষী রাখা হয়েছিল। কিন্তু তাঁদের কোনও বক্তব্য রিপোর্টে নেই। রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাঁ পায়ে একাধিক আঘাত হয়েছে। কিন্তু সেটা পায়ের পাতা, হাঁটু না গোড়ালি? তা বলা হয়নি। মুখের কোথায় কোথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে তা-ও লেখা নেই। মৃতার মুখের ভিতরে এবং চোখে রক্ত পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু কী ধরনের ক্ষত থেকে ওই রক্তপাত, তা উল্লেখ করা হয়নি। মৃতদেহের পিছনের অংশে কোনও আঘাত ছিল কি না তা-ও রিপোর্টে লেখা নেই বলে তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি।
আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিবিআইয়ের (CBI) এক কর্তা বলেন, “২৬ বছরের চাকরি জীবনে এমন অবহেলায় তৈরি সুরতহাল রিপোর্ট দেখিনি। ওই বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটকে একাধিক বার তলব করে এত দ্রুত সুরতহাল রিপোর্ট লেখা নিয়ে তাঁর বয়ান নথিবদ্ধ করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি বিষয়ে খটকা রয়েছে বলে তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি। সুপ্রিম কোর্টের মামলার শুনানিতে ওই সব বিষয়েই মুখবন্ধ খামে রিপোর্ট পেশ করা হবে।” তদন্তকারী সংস্থা (CBI) সূত্রে দাবি, বিভিন্ন রিপোর্টের বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, ঠান্ডা মাথায় সুকৌশলে ধাপে ধাপে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের চেষ্টা হয়ে থাকতে পারে। তাঁদের দাবি, সুরতহাল রিপোর্টে তথ্যের খামতি ও সূর্যাস্তের পরে তাড়াহুড়োয় ময়না তদন্ত এখন তদন্তে অন্যতম প্রধান বাধা হয়ে উঠছে (RG Kar)।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।