এবার পুজোতে তিহাড়েই থাকতে হবে সুকন্যাকে!
'দুয়ারে সরকার' শিবিরে উধাও অনুব্রতর ছবি (নিজস্ব চিত্র)
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal) ছিলেন বীরভূমের বেতাজ বাদশা। তাঁর কথাতেই এই জেলায় বাঘে-গরুতে একঘাটে জল খেত। ফলে, সরকারি হোক বা দলীয় কর্মসূচি, অনুব্রতের ছবি থাকা এক প্রকার অঘোষিত নির্দেশ ছিল জেলায়। গরু পাচার মামলায় গত বছর গ্রেফতার হওয়ার পরে যত দিন গিয়েছে, ততই কেষ্ট ম্যাজিক উধাও হয়ে গিয়েছে। দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তাঁর বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতা হিসেবে পরিচিত কাজল সেখ। এখন কেষ্টকে কার্যত ঝেড়ে ফেলা দেওয়ার মতো অবস্থা দাঁড়িয়েছে বলে দলের অন্দরে গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
‘দুয়ারে সরকার’ শিবির বসেছে বীরভূমের দুবরাজপুর ব্লকের তৃণমূল পরিচালিত লোবা গ্রামে। লোবা পঞ্চায়েতের তরফে যে তোরণটি বসানো হয়েছে, তার উপরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, নিচে দু'পাশে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখের ছবি। এমন তোরণ থেকে বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mondal) ছবি আগেই সরেছিল। দলীয় সূত্রেই খবর, ‘প্রভাবশালী’ তকমা ঘোচাতে উঁচুতলা থেকেই দলীয় কর্মসূচিতে অনুব্রতের নামে স্লোগান দেওয়া বা তাঁর ছবি ব্যবহারে একসময়ে ‘নিষেধাজ্ঞা' জারি হয়েছিল। আর এখন দলীয় বা সরকারি কর্মসূচিতে ‘ব্রাত্য’ অনুব্রত। একটা সময়ে মমতা, অভিষেকের সঙ্গে তোরণ, ফ্লেক্স বা ব্যানারে দেখা যাচ্ছিল জেলার অন্য নেতা বা মন্ত্রীর ছবি। তৃণমূল সূত্রেই জানা যাচ্ছে, পঞ্চায়েত ভোটের মুখে অনুব্রতের ছবি ফেরানোর ‘নির্দেশ” এসেছিল ঠিকই, কিন্তু সাময়িক। ঠিক সেই সময় থেকেই ‘উত্থান’ কাজল শেখের। দলের নানুর ব্লক কমিটির কার্যকরী সভাপতি কাজলকে প্রথমবার ভোটের টিকিট দেয় দল। প্রথম বারেই বিপুল ব্যবধানে জিতে সভাধিপতি হওয়ার পরে তাঁর ‘প্রভাব’ ও ‘দাপট’ আরও বেড়েছে জেলায়। অনুব্রতের জায়গা দখল করেছেন কাজল।
অনুব্রত-পরবর্তী অধ্যায় কি শুরু হয়ে গিয়েছে জেলায়? যার প্রতিফলন দেখা গেল লোবা পঞ্চায়েতের তরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় আয়োজিত দুয়ারে সরকার শিবিরের তোরণে। যদিও কাজলের কথায়, 'তিনি আমার অভিভাবক। আমার রাজনৈতিক গুরু। উনি জেলা সভাপতি আছেন।' ব্যস ওই পর্যন্ত। বাস্তবে অন্য চিত্র দেখছে দলের কর্মীরা। এই প্রসঙ্গে জেলার এক নেতা বললেন,' বিকাশদা এখন পদে নেই। কেষ্টদা (Anubrata Mondal) জেলাতেই নেই! এটা মনে রাখতে হবে। এটাই বাস্তব।'
অনুব্রত মণ্ডলের গরু পাচার মামলার যাবতীয় নথি দিল্লিতে নিয়ে গেলেন ইডির আধিকারিকরা। বুধবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ অন্ডাল বিমানবন্দর থেকে দু'টি ট্রলি ভর্তি মামলার নথি নিয়ে দিল্লিতে উড়ে যান ইডির দুই আধিকারিক। তাঁদের সঙ্গে দিল্লি গিয়েছেন আসানসোল সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের দুই কর্মীও। দিল্লির আদালতে নথি জমা দেবেন তাঁরাই। এদিন গোটা টিমের নিরাপত্তায় ছিলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। জানা গিয়েছে, বিশেষ কোনও কারণ না থাকলে আজ বৃহস্পতিবার দিল্লির রাউজ অ্যাভিনিউ আদালতে গরু পাচার মামলার নথি জমা পড়ে যাবে। তারপর সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের দুই কর্মী দিল্লি থেকে ফিরে আসবেন।
এক-দুই মাস নয়, চারমাস পিছিয়ে গিয়েছে মূল গরুপাচার মামলার শুনানি। সূত্রের খবর, ২০২৪ সালের ১০ জানুয়ারি মামলার পরবর্তী শুনানি। এদিকে, দিল্লি হাইকোর্টে সুকন্যার জামিনের আবেদন আপাতত পিছিয়ে গিয়েছে বলে খবর। অর্থাৎ এবছর আর জামিনের আবেদন না হওয়ার সম্ভাবনা। সামনের বছর জামিনের আবেদন হতে পারে। যার ফলে এবার পুজোতে তিহাড়েই থাকতে হবে সুকন্যাকে। এই আদালতেই জামিনের জন্য আবেদন করেছেন অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal)। কিন্তু তিনি কি পুজোর সময় বের হতে পারবেন? এনিয়ে এখনও কোনও নিশ্চয়তা মেলেনি। সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে সেই মামলার শুনানি হবে। তারপরই বোঝা যাবে তিনি আদৌ পুজোর সময় জেল থেকে বের হতে পারবেন কি না।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।