Targeting Minority: কীভাবে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নিপীড়ন চলছে, তা নিয়েই আমাদের দ্বিতীয় খণ্ডের ধারাবাহিক প্রতিবেদন-‘আতঙ্কের বাংলাদেশে জঙ্গলের রাজত্ব’। আজ নবম পর্ব।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ইউনূস (ফাইল ছবি)
অনেকেই বলছেন, হাসিনা সরকারকে উৎখাত করার পর থেকেই জঙ্গলের রাজত্বে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। বেছে বেছে যেমন মন্দির এবং ধর্মস্থানে অবাধে ভাঙচুর চালানো হয়েছে, আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে ঘরবাড়িতে, একই সঙ্গে মারাত্মক বেড়ে গিয়েছে গণপিটুনি এবং খুন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই টার্গেট সংখ্যালঘু হিন্দু অথবা বিরোধী রাজনৈতিক কণ্ঠ। সারা বিশ্ব দেখছে, শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া ইউনূসের স্বরূপ। ইসকনের সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাস গ্রেফতার হওয়ার পর গোটা বিশ্ব স্তম্ভিত। আওয়ামি লিগপন্থী জনপ্রতিনিধি, পুলিশ অফিসার থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পদস্থ কর্তাদের কী করুণ পরিণতি হয়েছে, তাও কারও অজানা নয়। প্রথম খণ্ডে আমরা ১২টি পর্বে তুলে ধরেছিলাম নানা অত্যাচারের কাহিনি। এবার সেসব নিয়েই আমাদের দ্বিতীয় খণ্ডের ধারাবাহিক প্রতিবেদন। আজ নবম পর্ব।
আতঙ্কের বাংলাদেশে জঙ্গলের রাজত্ব-৯
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ২০২৪ সালের অগাস্ট মাসে হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বাংলাদেশ (Bangladesh Crisis 21) জুড়ে শুরু হয় অরাজকতা। এই সময়ে গণতন্ত্র ভুলুন্ঠিত হয়। দিকে দিকে বিরোধী আওয়ামি লিগ সমেত অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলির ওপরে আছড়ে পড়ে ব্যাপক আক্রমণ। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, খুলনা থেকে রাজশাহী-প্রত্যেকটি জায়গাতে সংখ্যালঘুদের ওপর চলে ব্যাপক নির্যাতন। মহিলাদের ওপরে চলতে থাকে অত্যাচার। ঠিক এমন অবস্থায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে রাজনীতি নিষিদ্ধ করে দেয় ইউনূস সরকার। এমন সিদ্ধান্তের পিছনে অন্যতম কারণ ছিল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির ছাত্র রাজনীতি থেকে আওয়ামি লিগকে দূরে রাখা। কারণ ইউনূস সরকার ক্ষমতা দখল করার পরেই বাংলাদেশের সমস্ত ধরনের জনপ্রতিনিধিদের জোর করে পদত্যাগ করানো হয়। প্রত্যেকটি জেলা পরিষদ থেকে বাংলাদেশের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের পদত্যাগ করানো হয়। ভেঙে দেওয়া হয় সে দেশের পার্লামেন্টকেও।
সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিকভাবে এই কাজ করতে থাকে ইউনূস সরকার। স্বাভাবিকভাবে ইউনূস হলেন সরকারের মুখোশ এবং এই সরকারের প্রাণভোমরা বিএনপি এবং জামাতের হাতেই রয়েছে। আসলে একচ্ছত্রভাবে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে (Bangladesh Crisis 21) দখল করার জন্যই তারা ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করে দেয়। এর পাশাপাশি যুব সমাজকে কীভাবে মৌলবাদী শিক্ষায় শিক্ষিত করা যাবে, সেই পরিকল্পনাও চলতে থাকে। সাধারণভাবে ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে পড়ুয়াদেরকে গণতন্ত্রের পাঠ শেখানো হয়, মূল্যবোধের পাঠ দেওয়া হয় তাঁদেরকে। উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলিতে ছাত্র রাজনীতিকে নিষেধ করার ফলে গণতন্ত্রের মূল্যবোধ হারিয়ে যায় বাংলাদেশে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ নিয়ে খবর লেখা হয় বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এবং সরকারের এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্নও তোলা হয়।
শুধুমাত্র তাই নয়, ইউনূস সরকারের আমলে (Targeting Minority) আরও ন্যক্কারজনক ঘটনা সামনে আসে। যখন মুক্তিযোদ্ধাকেও চূড়ান্ত অসম্মান করে জামাত-বিএনপির নিয়ন্ত্রণে থাকা এই সরকার। আসলে ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পাকিস্তানী সৈন্য এবং রাজাকারদের হাত থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে আনা হয়েছিল। পাকিস্তানি সৈনিক এবং রাজাকারদের বিরুদ্ধে আনা এই স্বাধীনতাকে কখনই মেনে নিতে পারেনি জামাত-বিএনপি। জামাত-বিএনপির মৌলবাদীরা যেদিন গণভবন দখল করে, সেই সময় করুণ ছবি সামনে আসে। বাংলাদেশ তৈরির প্রধান স্থপতি, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা, পাকিস্তানের হাত থেকে যিনি বাংলাদেশকে ছিনিয়ে নিয়েছিলেন, সেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের মূর্তিকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যেতে থাকে, হাসিনা সরকারের পতনে বাংলাদেশের রাজাকাররা ঠিক কতটা উচ্ছ্বসিত।
ইউনূস জমানায় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ওপরেও চলে ব্যাপক অত্যাচার। তাঁদেরকেও নানাভাবে সম্মানহানি করা হতে থাকে। এরকমই ঘটনা উঠে আসে, যখন মতিয়া চৌধুরী নামের এক স্বাধীনতা সংগ্রামীকে কবর দেওয়ার জায়গাটুকু পর্যন্ত জোগাড় করে দেয়নি ইউনূস সরকার। শুধুমাত্র তাই নয়, একজন স্বাধীনতা সংগ্রামীকে যে সম্মান জানানোর (Bangladesh Crisis 21) রীতি চালু ছিল স্বাধীন বাংলাদেশে, সেটাকে পর্যন্ত অস্বীকার করা হয়। ন্যূনতম অন্তিম সম্মানটুকু বাংলাদেশে বিএনপি ও জামাতের নেতৃত্বে চলতে থাকা ইউনূস সরকার দেয়নি মতিয়া চৌধুরীকে। এ নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবরও লেখা হয়। শুধুমাত্র তাই নয়, মতিয়া চৌধুরীর অপরাধ ছিল, তিনি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামি লিগের সরকারের একজন প্রাক্তন মন্ত্রী ছিলেন। তথাপি আওয়ামি লিগের একজন সক্রিয় নেত্রী ছিলেন। মতিয়া চৌধুরীর কবরের জন্য ইউনূস সরকার কোনও রকমের জায়গা না দেওয়ায়, অবশেষে বাধ্য হয়ে স্বামীর কবরের পাশেই কবর দেওয়া হয় স্বাধীনতা সংগ্রামীকে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।